অপারেশন ‘সিঁদুর, ‘পাকিস্তান সেনা কেন চাপে ছিল? ডিউটির মধ্যেই ভয়ঙ্কর তথ্য ফাঁস করলেন ভারতীয় DGMO!

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযান মহাপরিচালক (DGMO), লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘোই (DGMO Rajiv Ghai) ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor) প্রসঙ্গে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি এই অপারেশনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি, পাকিস্তানের কার্যকলাপ এবং ভারতের পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে বড় বিবৃতি দিয়েছেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘোই দাবি করেছেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিল এবং নিজেদের মুখরক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LOC) “কাপুরুষোচিত পদক্ষেপ” নিয়েছিল। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধু সন্ত্রাসীদেরই নিশানা করেনি, বরং সম্ভাব্য হামলার প্রতিটি দিক মাথায় রেখে আগে থেকেই সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল।

‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী চাপের মুখে ছিল’
ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘোই ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি নিয়ে বড়সড় তথ্য ফাঁস করে বলেছেন:

“সবারই জানা যে সে সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিল। তাদের ভাবমূর্তি এবং সেনাবাহিনীর সম্মান রক্ষা করা দরকার ছিল। এর জন্য তারা সেটাই করেছিল যা তারা সব সময় করে—একটি কাপুরুষোচিত হামলা। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া ছিল অনিবার্য।”

তিনি স্পষ্ট করে জানান, ভারতের লক্ষ্য ছিল খুব পরিষ্কার— “আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছিলাম, কোনো দেশ বা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করিনি।”

সন্ত্রাসীদের ওপর নিখুঁত আঘাত
ডিজিএমও বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসী আস্তানাগুলি ধ্বংস করা। তারা জানতেন কী করতে হবে এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে গেছেন। তবে পরিস্থিতিকে বাড়িয়ে তোলার কোনো উদ্দেশ্য ভারতের ছিল না, যতক্ষণ না তারা সেদিকে যেতে বাধ্য হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘোই জানান, ভারত যখনই সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানে, পাকিস্তান সঙ্গে সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে গুলি চালানো শুরু করে। কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল এবং যেকোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে পুরোপুরি তৎপর ছিল।

LOC-তে পাকিস্তানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘোই আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি পাকিস্তান ১৪ আগস্ট যে পুরস্কারের তালিকা (Awards List) প্রকাশ করেছে, তাতে অস্বাভাবিকভাবে বেশি মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তিনি দাবি করেন, “এটি ইঙ্গিত দেয় যে পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ১০০-র বেশি সেনার মৃত্যু বহন করতে হয়েছে। এটা তাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল, যা তারা এখনও পর্যন্ত লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।”

‘আমরা চার থেকে পাঁচ ধাপ এগিয়ে ছিলাম’
ডিজিএমও ঘোই স্পষ্ট করেন যে ভারত পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে অভিযানে নেমেছিল। তিনি সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে বলেন:

“মিডিয়ার অনেক বিতর্কে মানুষ বলে যে আমরা কেবল সন্ত্রাসী আস্তানা লক্ষ্য করছিলাম এবং পাকিস্তানের জবাবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এমন চিন্তা করা অত্যন্ত অপরিণত এবং বালখিল্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মতো পেশাদার বাহিনী কখনওই প্রস্তুতি ছাড়া কোনো অভিযানে নামে না।”

তিনি জানান, ভারতীয় সেনা ৪ থেকে ৫ ধাপ এগিয়ে যুদ্ধ-রণনীতি (Wargaming) তৈরি করেছিল। “আমরা জানতাম পাকিস্তান কী করবে। তাই আমরা তাদের দ্বিতীয় স্তরে গিয়ে আঘাত করি—ঠিক সেখানেই, যা তারা আশা করেনি। এই কারণেই তাদের এত বেশি সংখ্যক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।”

‘যুদ্ধ চাই না, তবে জবাব দেবই’
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘোই শেষ বার্তায় বলেন, ভারতের উদ্দেশ্য সংঘাত নয়, বরং শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। “আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে যদি আমাদের সীমান্ত বা নাগরিকদের ওপর হামলা হয়, তাহলে জবাব সুনিশ্চিত এবং তা হবে অত্যন্ত সিদ্ধান্তমূলক (Decisive)।” তাঁর এই বিবৃতিতে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে ভারত প্ররোচিত হয় না, ভয়ও পায় না, তবে দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হলে জবাব নিশ্চিত এবং চূড়ান্ত হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy