একসময় পশ্চিম মেদিনীপুরে কালীপুজোর ততটা প্রচলন না থাকলেও, মেদিনীপুর শহরের এক এবং অন্যতম আকর্ষণ ছিল সেতুয়া পরিবারের কালীপুজো। প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই ঐতিহ্যবাহী পুজো আজও দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে অত্যন্ত জাগ্রত হিসেবে পরিচিত। কালীপুজোর প্রাক্কালে তাই জোর কদমে চলছে এই পরিবারের পুজোর প্রস্তুতি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, প্রপিতামহ সুরেন্দ্রনাথ সেতুয়ার হাত ধরে মূলত স্বপ্নাদেশেই এই পুজোর সূত্রপাত হয়েছিল। একসময় ঢাক, ঢোল ও বাদ্যি সহকারে জাঁকজমকভাবে ভোররাত পর্যন্ত পুজো হতো। এই সুরেন্দ্রনাথ সেতুয়ার পদবী থেকেই এলাকার নাম হয়েছে ‘সেতুয়া লেন’।
কেন এই পুজো এত বিখ্যাত?
সেতুয়া পরিবারের কালীপুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এই জাগ্রত কালী মায়ের পুজোয় কোনও বলি প্রথা নেই। পরম্পরা মেনে পরিবারের সদস্যরা গোস্বামী মতে এই পুজো করে আসছেন। এই জাগ্রত প্রতিমা দেখতে শুধু পাড়ার নয়, আশেপাশের জেলার মানুষও প্রতি বছর ভিড় করেন।
সন্ধ্যা থেকে নৈবেদ্য সহকারে পুজোর আয়োজন করা হয়। এরপর আতশবাজি প্রদর্শনী ও পটকা ফাটানোর মধ্য দিয়ে মায়ের পুজো চলে ভোর পর্যন্ত। পুজোর শেষে বহু মানুষ অন্নকূট প্রসাদ গ্রহণ করেন।
আধুনিকতা নয়, পরম্পরায় বিশ্বাসী সেতুয়া পরিবার
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক পুরনো রীতির পরিবর্তন হলেও, এই পরিবারের সদস্যরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুশাসন এখনও কঠোরভাবে মেনে চলেন। বর্তমানে বিসর্জনের সময় ব্যান্ড পার্টি বা ডিজে বাজানো হয় না। পরিবারের সদস্যরা পুরনো সংস্কৃতি ও নিয়ম মেনে নিরঞ্জন পর্ব সম্পন্ন করেন।
পরিবারের সদস্য স্বপন কুমার সেতুয়া জানান, “আমরা পুরনো সেই রীতিনীতিকে আঁকড়ে ধরে রেখেছি। অর্থনৈতিক কারণে কিছুটা জাঁকজমক কমেছে বটে, তবে সেই ভোর পর্যন্ত পুজো হওয়ার রীতি আমরা এখনও পালন করে চলছি। কিন্তু আধুনিকতার সঙ্গে বিসর্জনের ওই ডিজে বা ব্যান্ড পার্টি আমাদের হয় না। নির্দিষ্ট অনুশাসন ও সংস্কৃতি মেনেই নিরঞ্জন পর্ব হয়।”
যদিও সুরেন্দ্রনাথ সেতুয়ার বংশধররা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন, তবুও পুজোর দিনে সকলে একসঙ্গে হাজির হন এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে। স্থানীয়রা মনে করেন, এই প্রতিমার সঙ্গে মেদিনীপুরের প্রথিতযশা অন্যান্য প্রতিমার বেশ মিল রয়েছে এবং অনেকে একে দুই বোনের সঙ্গেও তুলনা করে থাকেন।