২০২৫ সালে সংগঠিত অপরাধী ও মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ড পুলিশের কড়া পদক্ষেপের পর এখন এই রাজ্য পুলিশকে ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’-এর তকমা দেওয়া হচ্ছে। এই বছর এনকাউন্টারে ৩২ জন মাওবাদী এবং আমন সাহু ও উত্তম যাদবের মতো দুর্ধর্ষ অপরাধীরাও নিহত হয়েছে।
তবে সম্প্রতি সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পুলিশ যেভাবে অস্ত্র হাতে নিয়েছে, তাতে ঝাড়খণ্ডে এমন এনকাউন্টারগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ল্যাংড়া’।
ইউপি-র ধাঁচে ঝাড়খণ্ডে ‘অপারেশন ল্যাংড়া’
গত এক সপ্তাহের মধ্যে রাঁচি পুলিশ চারজন অপরাধীর এনকাউন্টার করে তাদের আপাতত পঙ্গু (ল্যাংড়া) করে দিয়েছে। মঙ্গলবার ধনবাদ পুলিশও এক কুখ্যাত অপরাধীর পায়ে গুলি করে তাকে আহত করেছে। ঝাড়খণ্ড পুলিশের এই পদক্ষেপকে অনেকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিখ্যাত ‘অপারেশন ল্যাংড়া’-র সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে এক বছরে ৪০টিরও বেশি এনকাউন্টারে অপরাধীদের পায়ে গুলি করা হয়েছিল।
ঝাড়খণ্ড পুলিশের আইজি অভিযান (পুলিশ মুখপাত্র) ডঃ মাইকেল এস রাজ জানান, মাওবাদীদের দাপট কমার পর এখন পুলিশের লক্ষ্য শহুরে অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করা। এই কারণেই সংগঠিত অপরাধী গোষ্ঠীগুলিকে টার্গেট করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যদি কেউ পুলিশের ওপর গুলি চালায়, তবে পুলিশকেও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এক সপ্তাহে রাঁচিতে ৩টি এনকাউন্টার
রাজধানী রাঁচিতে গত এক সপ্তাহে পুলিশের কড়া মেজাজ দেখা গেছে। ১০ অক্টোবর থেকে অপরাধীদের পায়ে গুলি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়:
১০ অক্টোবর, ২০২৫: রাঁচির রাতুর থানা এলাকায় রাহুল দুবে গ্যাংয়ের এক ডজন অপরাধীর খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। এনকাউন্টারে দুই অপরাধীর পায়ে গুলি লাগে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র (আটটি উন্নত মানের পিস্তল-সহ) উদ্ধার করা হয়।
১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (প্রথম এনকাউন্টার): কুখ্যাত সুজিত সিনহা গ্যাংয়ের সঙ্গে রাঁচির টুপুদানায় পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই এনকাউন্টারে আফতাব নামের এক কুখ্যাত অপরাধীর পায়ে গুলি লাগে।
১৩ অক্টোবর, ২০২৫ (দ্বিতীয় এনকাউন্টার): ঐ দিনই বিকেলে ম্যাক্লুস্কিগঞ্জে অলোক গ্যাংয়ের সঙ্গে রাঁচি পুলিশের এনকাউন্টার হয়। এই সংঘর্ষে কুখ্যাত অপরাধী প্রভাত কুমার রামের পায়ে গুলি লাগে।
ধনবাদ পুলিশও করলো ‘ল্যাংড়া’
রাঁচি পুলিশের যখন অপরাধীদের ওপর খড়্গহস্ত, ঠিক তখনই ১৪ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ধনবাদ পুলিশের সঙ্গে কুখ্যাত অপরাধী ভানু মাঞ্জির এনকাউন্টার হয়। ধনবাদের তেতুলমারি থানা এলাকার একটি পাহাড়ের কাছে ভোরে টহলরত পুলিশ ভ্যানকে লক্ষ্য করে অপরাধীরা গুলি চালায়। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে ভানু মাঞ্জির গুলি লেগে আহত হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই বছর এনকাউন্টারে নিহত দুই গ্যাংস্টার
২০২৫ সালে ঝাড়খণ্ড পুলিশ দুটি বড় এনকাউন্টারে দুই কুখ্যাত গ্যাংস্টারকে খতম করেছে:
১১ মার্চ, ২০২৫ (আমন সাহু): কুখ্যাত গ্যাংস্টার আমন সাহুকে ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেল থেকে রাঁচির হোটওয়ার জেলে স্থানান্তরিত করার সময় এটিএস (ATS)-এর টিমের ওপর তাঁর সঙ্গীরা হামলা চালায়। আমন সাহু স্বয়ং এটিএস-এর এক জওয়ানের থেকে ইনসাস রাইফেল ছিনিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। এটিএস-এর পাল্টা জবাবে আমন সাহু ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (উত্তম যাদব): চাতরার সিমরিয়া থানা এলাকায় পুলিশ কুখ্যাত অপরাধী উত্তম যাদবকে এনকাউন্টারে হত্যা করে। বিহার সরকার তার মাথার ওপর ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। সে ‘টাইগার গ্রুপ’ নামে এক অপরাধী গোষ্ঠীরও প্রধান ছিল।
ঝাড়খণ্ডে পুলিশের এই তৎপরতায় সাধারণ মানুষ সন্তুষ্ট হলেও, অপরাধী মহলে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।