শিক্ষার অধিকার আইন (RTE Act) অনুসারে, প্রাথমিক স্তরে (প্রথম থেকে পঞ্চম) ৩০ জন পড়ুয়া পিছু একজন এবং উচ্চ-প্রাথমিকে (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম) ৩৫ জন পড়ুয়া পিছু একজন শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তব চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভারতে এমন স্কুলের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪ হাজার ১২৫টি, যেখানে শিক্ষক আছেন মাত্র ১ জন!
একজন শিক্ষক, গড়ে ৩৪ জন পড়ুয়া:
কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ১ জন শিক্ষক বিশিষ্ট স্কুলগুলিতে মোট ৩৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ৭৬৯ জন পড়ুয়া পড়াশোনা করে। অর্থাৎ, প্রতিটি স্কুলে গড়ে প্রায় ৩৪ জন ছাত্রছাত্রী মাত্র ১ জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় রিপোর্টে উদ্বেগজনক চিত্র:
১ জন শিক্ষক বিশিষ্ট স্কুলের সংখ্যায় শীর্ষে: অন্ধ্রপ্রদেশ (১২,৯১১টি)। এরপর রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (৯,৫০৮টি), ঝাড়খণ্ড (৯,১৭১টি), মহারাষ্ট্র (৮,১৫২টি), কর্নাটক (৭,৩৪৯টি) এবং পশ্চিমবঙ্গ (৬,৪৮২টি)।
পড়ুয়ার সংখ্যায় শীর্ষে: ১ জন শিক্ষক বিশিষ্ট স্কুলগুলির মধ্যে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি উত্তরপ্রদেশে (৬ লক্ষ ২৪ হাজার ৩২৭ জন)। এরপর রয়েছে ঝাড়খণ্ড (৪.৩৬ লক্ষ) এবং পশ্চিমবঙ্গ (২.৩৫ লক্ষ)।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের হাল:
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ছবিও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। দিল্লিতে এমন স্কুল রয়েছে ৯টি এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ৪টি। তবে গড় ছাত্রসংখ্যার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে চণ্ডীগড়, যেখানে ১ জন শিক্ষক গড়ে ১,২২২ জন পড়ুয়াকে সামলান।
তবে রিপোর্টে এও দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক বছরে এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১,১৮,১৯০টি থেকে তা কমে বর্তমানে ১,০৪,১২৫টি-তে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের পদক্ষেপ ও শিক্ষা মহলের দাবি:
শিক্ষামন্ত্রকের এক ঊর্ধ্বতন কর্তা জানিয়েছেন, এই সংকট মোকাবিলায় সরকার সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। যেসব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা খুব কম, সেগুলিকে একত্রিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীবিহীন স্কুলের শিক্ষকদেরকে এক-শিক্ষক থাকা স্কুলগুলিতে পাঠানো হচ্ছে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী ন্যূনতম মানের শিক্ষা পেতে পারে। তবে শিক্ষা মহলের দাবি, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত না হলে শিক্ষার অধিকার আইনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে।