বয়স ৫৮, এখনও ঘরের কাজ সামলে রোজ সকালে টোটোর হ্যান্ডেল ধরেন তিনি। তিনি সুচিত্রা মুখার্জী, বাঁকুড়া শহরে যিনি পরিচিত ‘পুতুন দি’ নামে। পুত্র অভিষেক মুখার্জীর উচ্চশিক্ষার খরচ জোগাতে ২০১৫ সাল থেকে বাঁকুড়া শহরের লক্ষতোরা টোটো স্ট্যান্ডে নিয়মিত ভিড় করেন এই অদম্য নারী।
জানা গেছে, সুচিত্রা মুখার্জী একসময় পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। অর্থাৎ, সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। বর্তমানে সেই পদ ছেড়ে তিনি লড়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়ার রাস্তায়।
কেন এই পরিবর্তন?
সুচিত্রা মুখার্জী জানান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ থাকাকালীন অর্থের পরিমাণ অনেকটাই কম ছিল। তাঁর একমাত্র ছেলের উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন মেটানোর জন্যই তিনি এই বয়সে টোটো চালানোকে বেছে নিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে (২০১৫ সাল থেকে), যখন অনেকেই টোটো চালানোকে মহিলাদের কাজ হিসেবে দেখতেন না, তখন থেকেই পুতুন দি শহরের রাস্তায় নিজের জরাজীর্ণ সবুজ টোটোটি নিয়ে যাত্রী পরিষেবা দিয়ে আসছেন। ঝড়-জল উপেক্ষা করেও তিনি নিয়ম করে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
প্রথম মহিলা টোটো চালকের লড়াই
টোটো চালকদের দাবি, টোটোর বাজারে প্রতিযোগিতা যথেষ্ট কঠিন। সেখানে একজন মহিলা হয়ে এত বছর ধরে টিকে থাকা খুব সহজ কথা নয়। অনেকেই দাবি করেন, তিনিই হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা টোটো চালক।
নতুন প্রজন্মের টোটো চালকরাও এই সিনিয়র মহিলা টোটো চালকের কাছে বিভিন্ন টিপস অ্যান্ড ট্রিকস জানতে চান। শুধু চালকরাই নন, মহিলা যাত্রীরাও ‘পুতুন দি’-র এই জীবন যুদ্ধ দেখে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হন।
বাঁকুড়া শহরের সানবাঁধা এলাকার বাসিন্দা সুচিত্রা মুখার্জী ওরফে ‘পুতুন দি’ স্পষ্ট করে দিয়েছেন— অজুহাত নয়, পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তিনি তাঁর জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন। ছেলের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য এই বয়সেও শক্ত হাতে টোটোর হ্যান্ডেল ধরে আছেন তিনি। তাঁর এই লড়াই নারীশক্তির এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে।