চলতি বছরের জানুয়ারিতে যে পশ্চিম মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট কাণ্ডে একাধিক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল, ঠিক সেই হাসপাতালেই ফের এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। সোমবার ভোরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মারা যান ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিখা দে দাস (৩২)। এই ঘটনার জেরে হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে মৃতার পরিবার। তাদের অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতে মারা গিয়েছেন শিখা।
কেন গাফিলতির অভিযোগ পরিবারের?
মৃতার স্বামী পবিত্র দাস অভিযোগ করেন, তাঁর ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় রবিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। ইমার্জেন্সিতে দেখানোর পরে তাঁকে মাতৃমা বিভাগে পাঠানো হয়। পবিত্র জানাচ্ছেন, সেখান থেকে তাঁর স্ত্রীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রেফার করা হলেও ভর্তি নেওয়া হয়নি। ওইদিনই রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জ্বর ও কাশির ওষুধ দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পবিত্র বলেন, “ফের রাত ৩টা নাগাদ শ্বাসকষ্ট হওয়ায় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ফের সেখান থেকে মাতৃমা বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। অবস্থার অবনতি হলে ভোর পাঁচটা নাগাদ সিসিইউ-তে পাঠানো হয়। তারপরে সোমবার ভোর ৬টা নাগাদ মারা যায় ও।”
পবিত্রের অভিযোগ, “ভুল চিকিৎসার কারণে দু’টি প্রাণ নিয়ে নিলেন ডাক্তাররা।” তিনি জানিয়েছেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ না জানানো পর্যন্ত তাঁরা দেহ নেবেন না।
তড়িঘড়ি পদক্ষেপ প্রশাসনের:
ঘটনাটি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজের সুপার এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। সোমবারই বিষয়টি নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের সুপার এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারদের মধ্যে এক জরুরি বৈঠক হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল আসছে।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে ৩ জন স্বাস্থ্য ভবনের এবং ১ জন জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি থাকবেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরফেও একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।
মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি গড়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। পরিবারের ক্ষতি অপূরণীয়। সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, “আমার কাছে পরিবারের তরফে অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। রাজ্য থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল আসছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”