নেতিবাচক চিন্তার জাল ছিঁড়ুন! মানসিক শান্তি ফেরাতে যা করবেন জানুন

নেতিবাচক চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে মানসিক জটিলতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই নিজের মানসিক পরিচর্যা করা অত্যন্ত জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘মাই অনলাইন থেরাপি’র মনোবিজ্ঞানী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা এলিনা টুরনি জানিয়েছেন, “নেতিবাচক চিন্তাভাবনা যখন একটি দুষ্ট চক্রের মতো আবর্তিত হতে থাকে, তখন তাকে ‘চিন্তার ফাঁদ’ বা ‘অপ্রয়োজনীয় চিন্তন প্রক্রিয়া’ বলা হয়। এর সাধারণ উদাহরণ হলো, খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা করা (বিপর্যয়), সব কিছুকে ভালো বা খারাপের চরম দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা (সাদা ও কালো চিন্তা) এবং শুধুমাত্র আবেগের উপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা (আবেগিক যুক্তি)।”

যদিও সাধারণভাবে চিন্তাভাবনা তেমন উদ্বেগের কারণ নয়, তবে যখন মানুষ এই নেতিবাচক চিন্তার চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়ে, তখন এর প্রভাব তাদের কাজকর্মের উপরও পড়তে শুরু করে। এই নেতিবাচক চিন্তার ভিত্তিতে কাজ করার ফলে নিজস্ব বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় এবং এভাবেই এই চক্র চলতেই থাকে।

তবে মনোবিজ্ঞানীরা এই নেতিবাচক চিন্তার জাল থেকে মুক্তির কিছু কার্যকর উপায় বাতলেছেন:

১. প্রথমেই নেতিবাচক চিন্তা দমন করবেন না: ‘জয় অ্যান্ড ফিয়ার’ বইয়ের লেখক ডা. কার্লা মারি ম্যানলি বলেন, “নেতিবাচক চিন্তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং তাতে বিরতি দেওয়া জরুরি, তবে তা নিয়ে অতিরিক্ত মগ্ন হওয়া বা তাতে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া ঠিক নয়।” গবেষণায় দেখা গেছে, নেতিবাচক চিন্তা সম্পূর্ণরূপে দমন করার চেষ্টা না করে বরং সেগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং ধীরে ধীরে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

২. শ্বাস নিতে ভুলবেন না: অতিরিক্ত চিন্তিত থাকলে মানুষ প্রায়শই শ্বাস নিতে ভুলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে চারবার গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। যখনই খুব বেশি মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা অনুভব করবেন, তখন নিজের প্রতি মনোযোগ দিন এবং কিছুক্ষণ সময় নিয়ে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এটি আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করতে সহায়ক হবে। ম্যানলি এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেতন রাখতে প্রয়োজনে নোট লিখে চোখের সামনে রাখার পরামর্শ দেন।

৩. নিজের সকল চিন্তাকে বিশ্বাস করবেন না: মাথায় কোনো চিন্তা আসা মানেই তা সত্যি নয়। ক্রমাগত নেতিবাচক চিন্তা আসতে থাকলে নিজেকে সেই চিন্তাগুলো নিয়ে প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন টুরনি। আপনি যা ভাবছেন তার স্বপক্ষে কতটা যুক্তি আছে বা এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আদৌ কোনো কারণ আছে কিনা, তা গভীরভাবে ভেবে দেখুন। এছাড়াও, আপনি কি কেবল ঘটনার খারাপ দিকটিই দেখছেন নাকি সামগ্রিকভাবে বিষয়টি বিবেচনা করছেন, তা পুনরায় যাচাই করুন।

৪. ইতিবাচক বার্তার দিকে মনোযোগ দিন: নিজেকে শান্ত রাখতে এবং শক্তিশালী অনুভব করতে ইতিবাচক কথা ও বার্তার দিকে মনোযোগ দিন। যেমন – “সব ঠিক হয়ে যাবে”, “সব কাজ সঠিকভাবে হবে”, “আমি এটা করতে পারব” ইত্যাদি। ম্যানলি এই ধরনের ইতিবাচক বাক্য আপনার ওয়ালেট, আয়না বা সহজে চোখে পড়ে এমন কোনো স্থানে লিখে রাখার পরামর্শ দেন। মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও এই ইতিবাচক কথাগুলো স্মরণ করুন, যাতে আপনার মস্তিষ্ক সেগুলোকে গ্রহণ করে এবং ইতিবাচক সাড়া দেয়। পরবর্তীতে খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে এই মন্ত্র বাক্যগুলো আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ও শান্ত থাকতে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে সেই ইতিবাচক বাক্য লেখা স্থানটি স্পর্শ করুন, এতে একটি ভালো অনুভূতি কাজ করবে।

৫. নিজেই নিজের বন্ধু হোন: যখন আপনার মাথায় নিজের সম্পর্কে খুব খারাপ চিন্তা আসে, তখন ভাবুন আপনি কি আপনার কোনো বন্ধুর সাথে এমন কথা বলতেন? যদি আপনি নিজের বন্ধুর সাথে বা তার সম্পর্কে এমন খারাপ কথা বলতে না পারেন, তাহলে নিজেকেও নিজের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করুন এবং এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। টুরানি আরও পরামর্শ দেন, “কোথা থেকে এই আত্মসমালোচনা আসছে তা খুঁজে বের করুন। পুরনো কোনো অভিজ্ঞতার প্রভাব বর্তমানে আপনার উপর পড়ছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখুন।”

৬. শান্তিপূর্ণ চিত্র কল্পনা করুন: মাথায় খারাপ কোনো চিন্তা এলে তা থেকে মুক্তি পেতে সুন্দর ও মনোরম কোনো জায়গার কথা ভাবার পরামর্শ দেন ম্যানলি। কোনো খোলা মাঠ, নীরব সমুদ্র সৈকত অথবা ছায়াঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় নিজেকে কল্পনা করুন। নিজেকে এমন শান্ত পরিবেশে আপনার পছন্দের কোনো প্রাণী বা বন্ধুর সাথে কল্পনা করুন। এই ধরনের শান্তিপূর্ণ চিত্র আপনার মনকে শান্ত করতে এবং নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখতে সহায়ক হবে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy