ডালিম ও তার খোসার আশ্চর্য গুণ জানেন? এড়িয়ে গেলে মিস করবেন

ছোট ছোট লাল রঙের দানাগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনি মিষ্টি। ডালিম বা বেদানা শুধু স্বাদের জন্যই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও এক অসাধারণ ফল। একে সুপারফুড হিসেবে গণ্য করা হয়। এর প্রতিটি দানায় লুকিয়ে রয়েছে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।

রক্তাল্পতা থেকে শুরু করে ত্বকের নানা সমস্যা, এমনকি হৃদরোগের মতো কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও ডালিম উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান। আমরা সাধারণত ডালিমের রস পান করে থাকি, কিন্তু এর খোসার চায়ের কথা কি কখনো শুনেছেন? ডালিমের ভেতরের অংশের মতোই এর খোসাও কিন্তু অনেক উপকারী।

ডালিমের খোসা দিয়ে তৈরি চা ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সক্ষম। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক ডালিমের খোসা দিয়ে চা বানানোর সহজ পদ্ধতি:

১. প্রথমে ডালিমের খোসাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
২. এরপর সেগুলোকে রোদে শুকিয়ে নিন।
৩. শুকানো খোসাগুলো মিহি করে গুঁড়ো করে একটি পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
৪. একটি পাত্রে জল গরম করে তাতে ডালিমের খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন।
৫. স্বাদ বাড়াতে আপনি এর সাথে সামান্য লেবুর রস ও মধু যোগ করতে পারেন।

এই পানীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ডালিমে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল থাকে, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক বেদানা চায়ের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে আমাদের ধমনী ধীরে ধীরে শক্ত ও সংকুচিত হয়ে আসে। এর ফলস্বরূপ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। ডালিমের খোসার চা রক্তনালীকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং মাংসপেশিতে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করে: বেদানা বা ডালিমের পোমেগ্র্যানেট অয়েল চমৎকার ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ট্যানিন সমৃদ্ধ বেদানা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে বিশেষভাবে উপকারী।

রক্তাল্পতা দূর করে: ডালিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে, যা রক্তাল্পতা নিরাময়ে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি রুচি বাড়াতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি, জন্ডিস, বুক ধড়ফড়ানি, বুকের ব্যথা, কাশি এবং কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করতেও এটি উপকারী।

হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে: কার্টিলেজ নামক অস্থি রস হাড়ের সংযোগস্থলে থাকে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। বেদানার রসে পটাশিয়াম ও পলিফেনল থাকায় এটি হাড়ের বিভিন্ন ক্ষতিকর রোগ থেকে রক্ষা করে। এমনকি অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে এই ফলটির মাধ্যমে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় বেদানা সিস্টোলিক ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে মানসিক চাপ ও উত্তেজনা কমে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক: বেদানা শরীরে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। বিশেষত প্রস্টেট ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে বেদানার অ্যান্টি-ক্যানসার এজেন্ট ভালো কাজ করে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: বেদানার খোসার গুঁড়ো ফেসপ্যাক হিসেবে মুখে মাখলে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

সুতরাং, শুধু ডালিমের রস নয়, এর খোসাও যে কতখানি উপকারী তা আমরা জানতে পারলাম। তাই এবার থেকে ডালিমের খোসা ফেলে না দিয়ে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy