নয়ের দশকে ভারতের সঙ্গীতজগতে ‘কুইন অফ ইন্ডিপপ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আলিশা চিনয়। দিব্যা ভারতী, শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিতের মতো তারকা অভিনেত্রীদের কণ্ঠে গান গেয়ে প্রথম সারির সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম তুমুল জনপ্রিয় গান, ২০০৫ সালের ‘কাজরা রে’-এর সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক গায়িকার তীব্র প্রতিবাদের গল্প।
“পারিশ্রমিক মাত্র ১৫,০০০ টাকা!”
রানি মুখোপাধ্যায়, অভিষেক বচ্চন এবং অমিতাভ বচ্চন-ঐশ্বর্যা রাই অভিনীত এই আইকনিক ট্র্যাকটি তৎকালীন চার্ট বাস্টারে শীর্ষে ছিল। গানটি গেয়ে আলিশা চিনয় সেরা গায়িকা হিসেবে নামীদামি ফিল্মি পুরস্কারও জিতেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, এই গান গাওয়ার জন্য তাঁকে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মাত্র ১৫ হাজার টাকা!
আলিশা বলেন:
“‘কাজরা রে’-এর পর আমি সত্যিই রেগে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম—গায়িকাদের কোনও মূল্যই নেই নাকি? তখন আমি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-র মতো হিট গানের গায়িকা। শঙ্কর-এহসান-লয়-এর অনুরোধে গানটা গেয়েছিলাম, কিন্তু যখন টাকার চেকটা হাতে এল, তখন দেখি অঙ্কটা মাত্র ১৫,০০০ টাকার! আমি ওঁদের বললাম—’হ্যালো!’ এত বড় প্রযোজনা সংস্থা (যশ রাজ ফিল্মস), আর পারিশ্রমিক মাত্র ১৫ হাজার টাকা! আমি সেটা নিইনি। ওরা কয়েকবার পাঠিয়েছিল, আমি ফেরত পাঠিয়েছি।”
স্বত্বের আইন না বদলালে আর গান নয়!
আলিশা এই অভিজ্ঞতা নিয়ে সোজাসাপটা কথা বললেও, তিনি আজও নিজের অবস্থানে অনড়। তাঁর মতে, ‘গায়কেরাই আসল প্রাণ’, অথচ ইন্ডাস্ট্রি তাঁদের প্রাপ্য সম্মান বা পারিশ্রমিক দিচ্ছে না।
আলিশা ২০১০ সালে আরেকটি বিস্ময়কর তথ্য ফাঁস করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, বিদেশে নিজের গানের অনুষ্ঠানে যখন ‘কাজরা রে’ গাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের তরফে জানতে পারেন—যশ রাজ ফিল্মস নাকি ওই গানের ওপর স্বত্ব দাবি করছে! অর্থাৎ, গানটি গাইলে প্রযোজনা সংস্থাকে টাকা দিতে হতে পারে।
এই অভিজ্ঞতার পর আলিশা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন— “আর বলিউডে গান নয়, যতদিন না গানের স্বত্বের আইন বদলায়।” এমনকী মধুর ভাণ্ডারকর-এর ‘দিল তো বাচ্চা হ্যায় জি’ ছবিতেও গান গাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন তিনি।
অনু মালিক বিতর্ক
এটিই আলিশার প্রথম প্রতিবাদ নয়। এর আগে তিনি সঙ্গীত পরিচালক অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ দায়ের করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। অনু মালিকও পাল্টা মানহানির অভিযোগ এনে আলিশার কাছে দু’কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। যদিও বেশ কয়েক বছর মামলা চলার পর দু’পক্ষের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায়।
আজও ‘কাজরা রে’ বাজে, মানুষ নাচে তার তালে—কিন্তু এই তুমুল জনপ্রিয় গানের আড়ালেই লুকিয়ে ছিল এক গায়িকার ন্যায্য সম্মানের তীব্র প্রতিবাদ!