ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (NCRB) ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, টানা চতুর্থবারের মতো দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরের তকমা পেল কলকাতা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের ১৯টি মেট্রোপলিটান শহরের মধ্যে কলকাতায় প্রতি এক লক্ষ জনে অপরাধের হার ৮৩.৯টি, যা সর্বনিম্ন। এই তথ্য সামনে আসতেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বিজেপিকে (BJP) তীব্র আক্রমণ করেছেন।
বিজেপিকে ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ
কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে নিশানা করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ (X) লিখেছেন:
“টানা চতুর্থবার দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহরের তকমা পেয়েছে কলকাতা। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অবস্থা সঙ্গীন! অপরাধের তালিকায় শীর্ষে কোচি, তারপরেই দিল্লি এবং সুরাট। একেই কি তাঁরা আইনশৃঙ্খলা বলেন?”
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং কলকাতা পুলিশের সক্রিয়তা, স্মার্ট প্রযুক্তি ও রাত্রিকালীন টহলদারির মাধ্যমে কলকাতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গিয়েছে।
ফিরহাদের পাশাপাশি রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “এতদিন ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল যে দাবী করে আসছিল, তারই প্রমাণ বহন করছে NCRB রিপোর্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অপরাধের সঙ্গে কোনও আপোষ করবেন না শুধু বলেনই নি, তা প্রমাণ করেছেন।”
নারী সংক্রান্ত অপরাধের পরিসংখ্যান
এনসিআরবি রিপোর্টে কলকাতায় নারী-সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রেও তুলনামূলকভাবে ভালো ফলাফল দেখা গিয়েছে:
নারী নির্যাতনের ঘটনা: ২০২৩ সালে কলকাতায় মোট ১৭৪৬টি নারী নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।
অপরাধের হার: নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার প্রতি এক লক্ষের মধ্যে ২৫.৭টি।
ধর্ষণ: ২০২৩ সালে কলকাতায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীর ধর্ষণের সংখ্যা ১০টি।
যদিও রিপোর্টে প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ধর্ষণের সংখ্যা কম দেখালেও, নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনা প্রতি এক লক্ষ জনে ১৭২টি বলে জানানো হয়েছে, যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
রাজনৈতিক বিতর্ক
তবে এই স্বস্তির মধ্যেও রাজ্য সরকারের উপর চাপ বজায় রয়েছে। গত বছর আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস গণধর্ষণ-খুন এবং চলতি বছর দক্ষিণ কলকাতার আইন কলেজে গণধর্ষণের মতো ঘটনা রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এই দুটি ঘটনার অভিযুক্তদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) যোগসূত্র মেলায় বিজেপি সহ বাম-কংগ্রেস “কলকাতায় মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ” বলে অভিযোগ তুলেছিল। এই পরিস্থিতিতে NCRB রিপোর্ট কিছুটা স্বস্তি দিলেও, অপরাধীদের সঙ্গে শাসকদলের যোগসূত্র নিয়ে ওঠা প্রশ্ন কতটা খন্ডাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন রয়েছে।