আর কয়েকমাস পরই বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগে বীরভূম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সংগঠনে ক্রমশ বাড়তে থাকা ফাটলের ছবি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। জেলার হেভিওয়েট নেতাদের কোনোভাবেই ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে না ঘাসফুল শিবির। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবার প্রকাশ্যে এল দুর্গাপূজার সরকারি অনুষ্ঠান, কার্নিভালকে কেন্দ্র করে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই পরিস্থিতি? এই দ্বন্দ্বের মূলে রয়েছেন জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল শেখ। তাঁদের দীর্ঘদিনের বিরোধ সর্বজনবিদিত।
কার্নিভাল ঘিরে দড়ি টানাটানি:
২০২৩ সাল থেকে বীরভূম জেলায় তিনটি মহকুমায় আলাদা আলাদা কার্নিভাল শুরু হয়। এবারও তাই হচ্ছে— বোলপুর, সিউড়ি এবং রামপুরহাট। আর এই তিন মঞ্চে কোন হেভিওয়েট নেতা উপস্থিত থাকবেন, তা নিয়েই চরম দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে।
অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট): তিনি থাকবেন বোলপুরের কার্নিভালে।
কাজল শেখ: তিনি থাকবেন সিউড়ির মঞ্চে।
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়: রামপুরহাটের কার্নিভালে থাকবেন তৃণমূলের জেলা কমিটির চেয়ারম্যান ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
অনুব্রতর প্রত্যাবর্তন ও কাজলের প্রাসঙ্গিকতা:
অনুব্রত মণ্ডল জেলে থাকার সময় তাঁর অনুপস্থিতিতেই কাজল শেখের মতো বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা জেলার রাজনীতিতে ক্রমশ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। জামিন পেয়ে অনুব্রত ফিরলেও, তিনি জেলা সভাপতির পদ ফিরে পাননি; যদিও এখন তিনি জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, কাজল শেখের সঙ্গে তাঁর বিরোধ মেটাতে স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোর কমিটির সদস্য জানিয়েছেন, “অনুব্রত মণ্ডল আমাদের নেতা, তাই তাঁর পাল্লা ভারী হবে, এটাই স্বাভাবিক।” তৃণমূল সূত্রে খবর, কোর কমিটির ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৫ জন বোলপুরে (অনুব্রত মণ্ডলের মঞ্চে), ৩ জন সিউড়িতে (কাজল শেখের মঞ্চে) এবং ২ জন রামপুরহাটে থাকবেন।
বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে থাকবেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, আর সিউড়িতে কাজল শেখের সঙ্গে থাকবেন সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী।
কার্নিভালের মঞ্চে কতজন নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকছেন, কার মঞ্চ সবচেয়ে বেশি আলোচনার কেন্দ্রে আসছে, তার ওপরই জেলার আগামী রাজনীতিতে অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতৃত্ব ‘শ্যাম-কূল’ কোনটি রাখবে, তা নিয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন।
বিজেপির কটাক্ষ: ‘তামাশা পার্টি’
শাসক দলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “দানখয়রাত করতে করতেই ওদের দিন যায়। আর তা নিয়েও নিজেদের দলের মধ্যে দলাদলি। আসলে তৃণমূল তো কোনো রাজনৈতিক দল নয়, একটা তামাশা পার্টি।”