যখন গোটা বাংলা দুর্গাপূজার (Durga Puja) আনন্দ-উৎসবে ভাসছে, ঠিক সেই সময়েই জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামগুলিতে (Junglemahal Dasai Parab) তৈরি হয় এক সম্পূর্ণ ভিন্ন আবহ। এই বিশেষ সময়টায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করেন তাঁদের প্রাচীন রীতি, যা ‘দাসাই পরব’ (Dasai Parab) নামে পরিচিত। এই পরবে দেবীর খোঁজ চলে নাচের মাধ্যমে। তবে এই নাচ আনন্দের নয়, বরং গভীর দুঃখের— আর এর নেপথ্যে লুকিয়ে আছে তাঁদের এক বিশেষ বিশ্বাস।
আদিবাসী সমাজে শারদীয়ার উৎসবে দুর্গাকে (Durga) খুঁজে বেড়ানোর এই রীতি বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কিন্তু তাঁদের কাছে দুর্গা কোনও নারী নন; তাঁদের আরাধ্য দেবতা হলেন একজন শক্তিশালী ও বলবান পুরুষ— ‘হুদুরদুর্গা’। তাঁদের এই নাচের মূল উদ্দেশ্য হলো এই ভগবানকেই গ্রামে-গ্রামে খুঁজে বেড়ানো।
হুদুরদুর্গাকে খোঁজার সেই শোকগাথা
আদিবাসীদের লোককথা অনুযায়ী, আর্যরা একসময় আয়নম এবং কাজল নামে দুই নারীকে অপহরণ করেছিল। তাঁদের উদ্ধার করতেই বেরিয়েছিলেন হুদুরদুর্গাকে। কিন্তু পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তিনি আর ফিরে আসতে পারেননি। সেই কারণেই প্রতি বছর মহাষষ্ঠীর দিন থেকে জঙ্গলমহলের লালগড়, বিনপুর, শিলদা, বেলপাহাড়ি, জামবনি সহ বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী মানুষজন হুদুরদুর্গাকে খুঁজে বের করতে এই ‘দাসাই পরব’ পালনে মাতোয়ারা হন।
এই নাচ যেহেতু দুঃখের, তাই নতুন পোশাক পরে এটি পরিবেশন করা যায় না। পুরনো ধুতি-গেঞ্জি কেচে পরিষ্কার করে পরতে হয়। আদিবাসীদের বিশ্বাস, বলবান পুরুষ হুদুরদুর্গাকে খুঁজে পাওয়া গেলেই অপহৃত আয়নম ও কাজলকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
‘যুদ্ধনৃত্য’ দাসাই: কানে কানপাশা, মাথায় পালক
আদিবাসীরা এই ‘দাসাই নাচ’কে আদতে ‘যুদ্ধনৃত্য’ হিসেবেই দেখেন। এই নৃত্যে পুরুষেরা কানে কানপাশা, পায়ে আলতা-নূপুর এবং মাথায় পালক গোঁজা ফেট্টি পরে অংশ নেন। ঢোল, মাদল ও করতালের ছন্দে গ্রামের বিভিন্ন রাস্তা ও বাজারে এই বিশেষ নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা ‘হুদুরদুর্গাকে’ খুঁজে বের করতেই এই নাচের আয়োজন— এমনটাই বিশ্বাস স্থানীয় আদিবাসী বাসিন্দাদের।
আদিবাসী সমাজের একাংশ নিজেদের মহিষাসুরের বংশধর বলে মনে করেন এবং তাঁরা গর্বের সঙ্গে এই আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। তাঁদের কাছে এই পরবের মাহাত্ম্যই আলাদা।