সকাল, দুপুর কিংবা রাতের খাবার, আমাদের বেশিরভাগেরই অভ্যাস স্টিলের থালা বা কাঁচের প্লেটে খাওয়ার। তবে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কিছু চিরাচরিত অভ্যাস বদলানো জরুরি। তাই আর দেরি না করে ফিরে যান পুরনো রীতিতে। কলাপাতায় খাওয়া শুরু করুন, দেখবেন বিপদজনক রোগ আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষবে না।
ভারতীয় চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কলাপাতার রসে রয়েছে অসাধারণ সব গুণাগুণ। আর যখন সেই রস খাবারের সঙ্গে মেশে, তখন তা আপনার শরীরে পৌঁছে দেয় ভরপুর পুষ্টি। এর জন্য আপনাকে কোনো অতিরিক্ত পরিশ্রমও করতে হবে না।
কলাপাতার রসে বিদ্যমান সাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ট্যানিন আপনার শরীরের জন্য টনিকের মতো কাজ করে। তবে এর রস করে খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র দিনের এক বা দু’বারের খাবার কলাপাতায় খেলেই আপনি এর উপকারিতা লাভ করতে পারবেন।
শহুরে জীবনে ফ্ল্যাটবাড়ির সংস্কৃতিতে কলাগাছ খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন। তাই প্রতিদিন কলাপাতায় খাওয়া সম্ভব না হলেও, অন্তত একটি বা দুটি প্রধান খাবারের সময় কলাপাতায় খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
চিকিৎসকদের মতে, কলাপাতায় খেলে পেটের রোগ এবং তার থেকে হওয়া জ্বর, সর্দি, পায়খানার মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রোগ আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না। আমাদের দেশে কলাপাতায় খাওয়ার চল প্রায় উঠে গেলেও, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এটি এখনও প্রচলিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিসের মতো সমস্যাতেও কলাপাতার রস আশ্চর্য উপকার দেয়। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য, আমাশয়, রক্তাল্পতা ও চর্মরোগের ক্ষেত্রেও কলাপাতার রস ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এমনকি এটি লিভারের সমস্যা সারাতে এবং রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। টিবি ও আন্ত্রিকের মতো রোগেও কলাপাতার রস ভালো ফল দেয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যকর কলাপাতায় রয়েছে পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কলাপাতায় খাবার খেলে সেই পলিফেনল খাবারের সঙ্গে মিশে শরীরে পুষ্টি যোগায়। এছাড়াও, কলাপাতার গায়ে মোমের মতো একটি আবরণ থাকে, যা খাবারে এক চমৎকার সুগন্ধ যোগ করে এবং খাবারকে আরও সুস্বাদু করে তোলে।
পরিবেশবান্ধবতার দিক থেকেও প্লাস্টিক বা কাগজের প্লেটের চেয়ে কলাপাতা অনেক বেশি উপযোগী। ব্যবহারের পর এটি খুব সহজেই পচে যায়। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে খেতে হলে কলাপাতা খুব বেশি ধোয়ারও প্রয়োজন হয় না। সামান্য জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই তাতে খাওয়া যায়।
অন্যদিকে, স্টিলের বা কাঁচের থালা ভালোভাবে ধুতে হয়। খুব ভালো করে ধোওয়ার পরেও সাবানের রাসায়নিক residue প্লেটে লেগে থাকতে পারে। কিন্তু কলাপাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নেই। তাই আপনার খাবার থাকে সম্পূর্ণ রাসায়নিকমুক্ত।
ব্যবহারিক দিক থেকেও কলাপাতা বেশ বড় আকারের হয়, যেখানে একসঙ্গে অনেক খাবার নেওয়া যায়। এর মোমের মতো আবরণ জলরোধী হওয়ায় ঝোল, অম্বল জাতীয় খাবারও নিশ্চিন্তে রাখা যায়। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাওয়ার জন্য কলাপাতা সত্যিই সেরা বিকল্প।