আধুনিক জীবনযাত্রায় আমরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটাই চার দেওয়ালের মাঝে। কাজের তাগিদে বাইরে বের হলেও, সানবাথ বা রোদ পোহানোর সুযোগ প্রায় হয় না বললেই চলে। অথচ দুঃখের বিষয়, আজকাল বহু মানুষ ত্বকের নানা সমস্যায় ভুগছেন, যার অন্যতম প্রধান কারণ হল ভিটামিন ডি-এর অভাব।
প্রকৃতির এই অমূল্য উপাদানটি সকালের সূর্যের আলোয় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। নিজের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট রোদে থাকার অভ্যাস গড়ে তুললে বহু শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক সানবাথের কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা:
১. রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:
সকালে সানবাথ গ্রহণ ত্বকের উপরিভাগে থাকা নাইট্রিক অক্সাইডকে সক্রিয় করে তোলে। এটি রক্তনালীকে প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. অনিদ্রা দূর করতে সহায়ক:
যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তাদের জন্য স্লিপিং পিলের বিকল্প হতে পারে কিছুক্ষণ রোদে থাকা। সূর্যের আলো মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা আমাদের ঘুমের চক্রকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক এবং ভালো ঘুম এনে দেয়।
৩. ত্বকের সমস্যা সমাধানে উপকারী:
অনেকেরই ধারণা সূর্যের রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করে। তবে সকালের রোদ ত্বকের জন্য উপকারী হতে পারে। ‘সিওরিয়াসিসের ক্লাইমেথোথেরাপির জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, সানবাথ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি:
বহু আগে থেকেই সূর্যের আলোকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক জাদুকরী উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। নিয়মিত সানবাথ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
শরীরে ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত উপস্থিতি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত রোদ পোহানোর অভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৬. হাড়কে করে শক্তিশালী:
ভিটামিন ডি দেহের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, যা আমাদের হাড়কে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে। তাই মজবুত হাড়ের জন্য সানবাথ অপরিহার্য।
৭. মন মেজাজকে রাখে ফুরফুরে:
মাত্র ১৫ মিনিটের সানবাথ আপনার মন ও মেজাজকে ভালো রাখতে পারে। সূর্যের আলো আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামক হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে, যা মনকে প্রফুল্ল রাখে।
৮. চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক:
ভিটামিন ডি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য রোদে দাঁড়ালে চোখের অনেক সমস্যা এড়ানো যায়।
৯. অ্যালঝেইমারের লক্ষণ কমাতে পারে:
‘আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শ অ্যালঝেইমার রোগীদের হতাশা এবং ভুলে যাওয়ার লক্ষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
তাই আর দেরি না করে, প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিটের জন্য সূর্যের আলোয় আসুন। প্রকৃতির এই সহজলভ্য উপহারটি আপনার স্বাস্থ্যকে বহু দিক থেকে উন্নত করতে সহায়ক হবে।