বাংলাজুড়ে যখন বিজয়া দশমীর বিষাদের সুর— মা উমা কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই এই নিয়মের ব্যতিক্রমী চিত্র ধরা পড়ল চন্দননগরে। এখানকার মানুষজন দেবী দুর্গার বিদায়ের সঙ্গেই জগদ্ধাত্রীর আগমনে আনন্দে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠলেন। বিজয়া দশমীর দিনেই অনুষ্ঠিত হলো জগদ্ধাত্রীর কাঠামো পুজো, যার মাধ্যমে শুরু হয়ে গেল আসন্ন উৎসবের প্রস্তুতি।
একদিকে যেমন মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলে মাকে বিদায় জানানো হলো, তেমনই শক্তির আরও এক রূপ জগদ্ধাত্রীর আহ্বানে মাতল চন্দননগর।
দশমীর সকালেই জগদ্ধাত্রী আহ্বান
দশমীর দিনে সকাল থেকেই চন্দননগর উত্তরাঞ্চল এবং বড়বাজার-সহ বেশ কিছু পুজো কমিটিতে কাঠামো পুজো হয়। মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে মা জগদ্ধাত্রীকে আহ্বান জানানো হয়। কাঠামো পুজোর পর থেকেই চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়।
দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস পরেই হয় জগদ্ধাত্রী পুজো। তাই এই কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়েই চন্দননগরবাসী এখন জোরকদমে সেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
কেন দশমীর দিনে কাঠামো পুজো?
চন্দননগর বড়বাজার পুজো কমিটির কর্মকর্তা প্রণব শীল জানান, দশমীর দিন তাঁদের কাছে ‘শুভ’ হওয়ায় অনেক পুজো কমিটিই এই দিন কাঠামো পুজো করে থাকে।
বড়বাজার পুজো কমিটি: এই বছর তাঁদের পুজো ৬৩তম বর্ষে পদার্পণ করল। এখানে নিয়মনীষ্ঠার সঙ্গে পুজো শুরু হয়েছে। এই পুজোর প্রতিমা ১৫ ফুট উচ্চতার এবং মণ্ডপ থিমের হলেও প্রতিমা তৈরি হয় ডাকের সাজের সাবেকি রূপে।
চন্দননগর উত্তরাঞ্চল বিবিরহাট জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির কোষাধ্যক্ষ সুজিত পাল জানান, এই বছর তাঁদের পুজো ৫৯ বছরে পড়ছে। তাঁদের পুজোয় মণ্ডপ সজ্জা হয় কাল্পনিক প্রাসাদের আদলে, যেখানে সাবেকি মূর্তির রূপ অপরিবর্তিত রেখে সাজে নতুনত্ব আনা হয়।
একদিকে ভদ্রেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা এবং বারোয়ারি পুজো কমিটিতে সিঁদুর খেলার পর্ব চলে, অন্যদিকে চুঁচুড়া ও চন্দননগর গঙ্গার ঘাটে শুরু হয় উমার বিসর্জন। কিন্তু উমার বিদায়ের দিনেও চন্দননগরবাসীর মনে বিষাদ নয়, বরং নতুন উৎসবের আগমনী আনন্দ বিরাজ করছে।