দশমীর সকালেই কি ‘শুভ বিজয়া’ বলা যায়? এই ভুল করলেই রেগে যান অনেকে! জেনে নিন শাস্ত্রের আসল নিয়ম

দুর্গাপুজোর সবচেয়ে বড় পর্ব শেষ, আজ বিজয়া দশমী। একদিকে যেমন দেবী উমার কৈলাসে ফেরার বিষাদের সুর, অন্যদিকে তেমনই মিষ্টিমুখ, কোলাকুলি আর বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ের নতুন শুরু। তবে এই ‘শুভ বিজয়া’ বলা নিয়েই বাঙালির মনে একটি পুরোনো বিতর্ক রয়েছে— সকালে না সন্ধ্যায়, কখন বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো উচিত?

অনেকেই মনে করেন, প্রতিমা নিরঞ্জনের আগে সকালে বা দুপুরে ‘শুভ বিজয়া’ বলা যায় না। কিন্তু এই বিষয়ে কি সত্যিই কোনও শাস্ত্রীয় নিয়ম আছে?

শাস্ত্র কী বলছে?
আসল কথা হলো, ‘শুভ বিজয়া’ সকালে না সন্ধ্যায় বলা হবে, সেই সংক্রান্ত কোনও নিয়ম কোনও শাস্ত্রে বা প্রাচীন পুঁথিতে উল্লিখিত নেই। অর্থাৎ, শাস্ত্রে এই বিষয়ে কোনও কড়াকড়ি নিয়ম নেই।

তবে, বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা বা রাতে শুভেচ্ছা জানানোর একটি প্রাচীন সামাজিক রীতির কারণ রয়েছে:

বিসর্জন পর্ব: মা দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন সাধারণত বিকেলের পর থেকে শুরু হয় এবং তা মাঝরাত পর্যন্ত চলতে পারে।

ঐতিহ্যবাহী রীতি: প্রাচীন বঙ্গে মায়ের বিসর্জন হয়ে যাওয়ার পর, সকলে বাড়ি ফিরে এসে বিজয়া উৎসব পালন করতেন। সেই উৎসবের অংশ হিসেবেই একে অপরকে ‘শুভ বিজয়া’ বলা এবং মিষ্টি মুখ করার রীতি ছিল।

যুক্তিসঙ্গত কারণ: যেহেতু প্রতিমা বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিজয়া পর্ব শুরু হয় না, তাই বিসর্জনের আগে ‘শুভ বিজয়া’ বলার রীতি প্রচলিত ছিল না।

কেন দশমীর সকালে ‘শুভ বিজয়া’ বলা অনেকেই পছন্দ করেন না?
দিনের শুরুতেই ‘শুভ বিজয়া’ বলা এড়িয়ে যাওয়ার বেশ কিছু বাস্তবিক কারণ রয়েছে:

১. সময় মেলানো: একেক মণ্ডপে একেক সময়ে প্রতিমা বিসর্জন হয়। কাউকে সকালে ‘শুভ বিজয়া’ বলা হলে, তার মণ্ডপে হয়তো তখনো বিসর্জন হয়নি। সময়গত এই গরমিল এড়াতে অনেকে এই সময়ে শুভেচ্ছা জানাতে চান না।

২. পরদিন হলো সেরা সময়: যেহেতু বিজয়া পর্ব বিসর্জনের পর শুরু হয় এবং তা লক্ষ্মীপূজার আগে পর্যন্ত চলে, তাই তাড়াহুড়ো করে দশমীর দিনই বলতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যাকে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে, তাঁর সুবিধার জন্য পরদিন, অর্থাৎ একাদশীর দিন ‘শুভ বিজয়া’ বলাকে অনেকেই সবচেয়ে সেরা সময় বলে মনে করেন।

বিসর্জনের দিনই ‘শুভ বিজয়া’ বলার কারণ
এই শুভকামনার নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক তাৎপর্য। পুরাণ মতে:

দেবী দুর্গা আশ্বিন মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে মহিষাসুরের বিরুদ্ধে নয় দিন নয় রাত্রির লড়াই শেষে জয়লাভ করেন।

এই জয়কে স্মরণ করেই এই দিনটিকে ‘বিজয়া দশমী’ বলা হয়।

অর্থাৎ, এই দিন দেবীর জয় নিশ্চিত হয়েছিল বলেই এই শুভক্ষণে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে বিজয়োৎসব পালন করা হয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy