২০২১ সালে কাবুলে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথমবার কোনো আফগান মন্ত্রী কাবুল থেকে নয়াদিল্লি সফরে আসছেন। আগামী সপ্তাহে, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারত সফরে আসছেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় কূটনৈতিক মহল মনে করছে, মুত্তাকির এই সফরের মাধ্যমে ভারত-তালিবান সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।
মুত্তাকির এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ তিনি রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। ফলে, তাঁর বিদেশ ভ্রমণের জন্য বিশেষ ছাড়ের প্রয়োজন হয়েছে। এই ছাড় ইঙ্গিত দেয় যে, ভারত এবং তালিবান উভয় পক্ষই সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।
কূটনৈতিক প্রস্তুতির দীর্ঘ পথ
ভারতীয় কূটনৈতিক মহল গত কয়েক মাস ধরে এই ঐতিহাসিক সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জানা গিয়েছে, জানুয়ারি মাস থেকেই ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি এবং সিনিয়র আইএফএস অফিসার জে.পি. সিং সহ ভারতীয় কর্মকর্তারা দুবাইয়ের মতো নিরপেক্ষ স্থানে মুত্তাকি ও অন্যান্য তালিবান নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল ১৫ মে, যখন বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মুত্তাকির সঙ্গে ফোনে কথোপকথন করেন। ২০২১ সালের পর এটিই ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের যোগাযোগ। ওই আলোচনায় জয়শঙ্কর কাশ্মীর-এর পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করার জন্য তালিবানের প্রশংসা করেন এবং আফগান জনগণের প্রতি ভারতের ‘ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বের’ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারত-আফগানিস্তান এক মঞ্চে
এপ্রিলের শুরুতে, তালিবান কাবুলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাশ্মীরে পহেলগাঁও জঙ্গী হামলার নিন্দা করেছিল। এই বিবৃতিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যা ইঙ্গিত দেয় যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারত এবং আফগানিস্তান একই অবস্থান নিতে শুরু করেছে।
ভারত তখন থেকেই আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা সম্প্রসারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
প্রায় ৫০,০০০ টন গম
৩৩০ টনেরও বেশি ওষুধ ও টিকা
৪০,০০০ লিটার কীটনাশক
ভূমিকম্পের পর দ্রুত ১,০০০টি পারিবারিক তাঁবু এবং ১৫ টন খাদ্য সরবরাহ।
তালিবান প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে জ্বালানি সহায়তা থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত সহযোগিতা পর্যন্ত বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে।
পাকিস্তানের জন্য বিরাট ধাক্কা
বিশ্লেষকদের মতে, আফগান মন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফর পাকিস্তানের জন্য একটি বিরাট ধাক্কা। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে কাবুলের উপর প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু সম্প্রতি ৮০,০০০ এরও বেশি আফগান শরণার্থীকে প্রত্যাবাসনের ইসলামাবাদের সিদ্ধান্ত তালিবানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে।
এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করেছে। মুত্তাকির ভারতে আসা ইঙ্গিত দেয় যে, তালিবান সরকার কাবুলের বৈদেশিক সম্পর্ককে বৈচিত্র্যময় করতে এবং পাকিস্তানের উপর আফগান নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী।
ভারতের জন্য, এই সফর একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তালিবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা নয়াদিল্লিকে আফগানিস্তানে তার দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ সুরক্ষিত করতে, অঞ্চল থেকে উদ্ভূত জঙ্গি হুমকি রোধ করতে এবং চীনা-পাকিস্তানি প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে সাহায্য করবে।
মুত্তাকির সফরের সময় ১০ অক্টোবর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ক্ষমতার সমীকরণ পুনর্নির্মাণ করে ভারত ও আফগানিস্তানকে সতর্ক সহযোগিতার এক নতুন পথে চালিত করতে পারে।