অসমের গর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গের অকালপ্রয়াণ ঘিরে এবার গুরুতর ‘অবহেলা’র অভিযোগ তুললেন তাঁর স্ত্রী গারিমা সাইকিয়া গার্গ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ৫২ বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় ডুবে জুবিনের মৃত্যুতে গোটা অসম যখন শোকে স্তব্ধ, তখন তাঁর স্ত্রী একাধিক প্রশ্নের মাধ্যমে এই মৃত্যুর নেপথ্যের রহস্য উন্মোচনের দাবি জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই উৎসব সংগঠক ও ম্যানেজার সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
“কেন এমন অবহেলা? তিনি তো অসমের প্রাণ!”
একটি সাক্ষাৎকারে গারিমা সাইকিয়া গার্গ প্রশ্ন তোলেন, “কেন এমন অবহেলা?” তাঁর অভিযোগ, জুবিন দীর্ঘদিন ধরে খিঁচুনি (seizure) রোগে ভুগছিলেন এবং চিকিৎসকরা তাঁকে বারবার জল বা আগুনের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, এমনকি গাড়ি চালাতেও বারণ করেছিলেন।
গারিমার কথায়, “ভিডিওতে স্পষ্ট, সেদিন জুবিন খুব ক্লান্ত ছিলেন। সবার জানা ছিল তাঁর রোগ। তবুও তাঁকে কেন লাইফ জ্যাকেট ছাড়াই ইয়ট পার্টিতে জলে নামানো হল? আমার স্বামীর সঙ্গে কেন এমন ব্যবহার করা হলো? তিনি শুধু আমার স্বামী ছিলেন না, তিনি অসমের প্রাণ, উত্তর-পূর্ব ভারতের হৃদয়স্পন্দন। এত অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
জোর করে জলে নামানোর সন্দেহ ও শেষ কথোপকথন
জুবিনের সঙ্গে তাঁর শেষ কথোপকথনের কথা মনে করে গারিমা জানান, আগের রাতে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পরদিনই সকালে হঠাৎ তাঁকে জলে নিয়ে যাওয়া হয়— এমনকি তিনি পোশাকও বদলাননি। গারিমার বিশ্বাস, “জুবিন যদি স্বেচ্ছায় জলে নামতেন, তাহলে উচ্ছ্বাস নিয়ে আমায় বলতেন। আমি বিশ্বাস করি, তাঁকে জোর করে জলে নামানো হয়েছিল।”
ম্যানেজার ও সহকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ
জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা-এর ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সন্দেহ গারিমার। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “আমি শুনলাম সিদ্ধার্থ কাঁদছে, ‘দাদা, দাদা’ বলে ডাকছে। CPR-এর কথা শুনলাম। আমি তো অবাক, কারণ জুবিনের কখনও হার্টের সমস্যা ছিল না। খিঁচুনি হলেও কয়েক মিনিটেই তিনি স্বাভাবিক হয়ে যেতেন। তাহলে তাঁকে CPR কেন দেওয়া হলো? এবং হাসপাতালে পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা কেন লাগল? উনি কি আগেই মৃত ছিলেন?”
গ্রেফতার ৪, চলছে তদন্ত
গারিমার অভিযোগে ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই উৎসব সংগঠক শ্যামকানু মহান্ত, ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, জুবিনের ব্যান্ডমেট শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও সহশিল্পী অমৃতপ্রভা মহান্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডি-র পাশাপাশি অসম পুলিশও এই ঘটনায় গভীরভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
গারিমার আশা, অসম সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখে দ্রুত তদন্ত হলে খুব তাড়াতাড়ি সত্যিটা সামনে আসবে। জুবিনের ভক্তদের মনেও তাই আজ একই প্রশ্ন – এই অকালমৃত্যু কি স্রেফ এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনো অবহেলা?