বৃহস্পতিবার যখন নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) তাদের শতবর্ষ উদযাপন নিয়ে ব্যস্ত, ঠিক সেই দিনেই দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়ার মাটি থেকে আরএসএস এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর বিস্ফোরক মন্তব্য, বিজেপি-আরএসএসের আদর্শের মূলে রয়েছে কাপুরুষতা।
কলম্বিয়ার ইআইএ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক আলোচনায় রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি-আরএসএস দুর্বলদের আঘাত করে, কিন্তু শক্তিশালী শত্রুদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে।
বিদেশমন্ত্রীকে টেনে এনে কাপুরুষতার অভিযোগ
রাহুল গান্ধী তাঁর এই দাবির সমর্থনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের একটি মন্তব্য তুলে ধরেন। রাহুল বলেন:
“বিজেপি-আরএসএসের প্রকৃত চরিত্র কী, তা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন যদি বিদেশমন্ত্রীর একটি বক্তব্য খেয়াল করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘চিন আমাদের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা কীভাবে তাদের সঙ্গে লড়াই করব?'”
রাহুল যোগ করেন, আদর্শের কেন্দ্রে কাপুরুষতা থাকলে তবেই কেউ এমন কথা বলতে পারেন।
সাভারকরের উদাহরণ ও ‘দুর্বলকে আঘাত’ করার আদর্শ
লোকসভার বিরোধী দলনেতা দামোদর বিনায়ক সাভারকরের লেখা থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘সাভারকর তাঁর বইয়ে লিখেছেন, একবার তিনি ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু মিলে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মারধর করেন এবং সেদিন তাঁরা খুব খুশি হয়েছিলেন।’
রাহুল এরপর যোগ করেন, “যদি পাঁচজন মিলে একজনকে মারধর করে এবং তাতে কেউ খুশি হয়, সেটা কাপুরুষতা। এটাই আরএসএসের আদর্শ—দুর্বলদের আঘাত করা।”
গণতন্ত্রের সংকট ও চিনের সঙ্গে তুলনা
রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাই আক্রমণের মুখে।
ভারতের বহুত্ববাদ: তিনি বলেন, ভারতে বহু ধর্ম, ঐতিহ্য ও ভাষা রয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সবার জন্য জায়গা করে দেয়, কিন্তু বর্তমানে এই ব্যবস্থা চারদিক থেকে আক্রমণের শিকার। তিনি নরেন্দ্র মোদী সরকার ও আরএসএসের বিরুদ্ধে ভারতের বহুত্ববাদী ভিত্তিকে দুর্বল করার অভিযোগ তোলেন এবং গণতন্ত্রের উপর এই আক্রমণকে ভারতের ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে উল্লেখ করেন।
চীন নয় ভারত: রাহুল ভারত ও চিনের রাজনৈতিক কাঠামোর তুলনা টেনে বলেন, চিন অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। অন্যদিকে, ভারত বিকেন্দ্রীকৃত এবং বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্ম নিয়ে গঠিত। তাঁর মতে, কর্তৃত্ববাদী উপায়ে বৈচিত্র্যকে দমন করা ভারতে সম্ভব নয়, যা চিন করে।
বিজেপির অভিযোগ, আরএসএস নীরব
রাহুল এর আগেও বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আরএসএস এবং বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছেন, যার জেরে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন। বিজেপির অভিযোগ, রাহুল বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে দেশের নিন্দা করা পছন্দ করেন। বিজেপির পক্ষ থেকে রাহুলের সমালোচনাকে দেশবিরোধী তকমা দেওয়া হলেও, আরএসএস নেতৃত্ব এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। সঙ্ঘের শতবর্ষের অনুষ্ঠানের দিন রাহুলের এমন কঠোর আক্রমণের জবাবে তারা কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।