আবারও শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ক্ষয় করার মারাত্মক অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এবার তিনি সুদূর কলম্বিয়ার EIA ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়ে সরাসরি এই মন্তব্য করেন। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও বহুত্ববাদ বর্তমানে চরম ঝুঁকির মুখে।
“গণতন্ত্রের উপর সামগ্রিক আক্রমণই আসল ঝুঁকি”
বৃহস্পতিবারের এই অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও, একই সঙ্গে একটি গুরুতর আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমি ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবসময় আশাবাদী। কারণ আমাদের দেশ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর, প্রযুক্তিগত দক্ষতায় অগ্রগণ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে।”
তবে তিনি সরাসরি বলেন, “ভারতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ।”
তাঁর মতে, ভারত একটি আলাপচারিতা— যেখানে সব মানুষ, সব সংস্কৃতি, সব ধর্ম ও নানা চিন্তাধারা নিজেদের জায়গা তৈরি করে। আর সেই জায়গা দেওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমানে “গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর সামগ্রিক আক্রমণ চলছে। এটিই আসল ঝুঁকি।”
চীনের সঙ্গে সরাসরি পার্থক্য
আলোচনায় রাহুল গান্ধী ভারত ও চীনের মধ্যে একটি তীব্র পার্থক্য টেনে আনেন। তিনি স্পষ্ট করে দেন, ভারতের অগ্রগতি কোনোভাবেই কর্তৃত্ববাদী মডেল অনুসরণ করে হতে পারে না।
তিনি বলেন, “আমরা চীনের মতো হতে পারব না। ওরা মানুষের কণ্ঠস্বর দমন করে একটি কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালায়। কিন্তু ভারতের গঠনই তা মেনে নেবে না। আমাদের নকশা বা ডিজাইন ভিন্ন। এখানে মানুষকে চেপে রাখা সম্ভব নয়।”
রাহুলের মতে, ভারতের শক্তি তার বৈচিত্র্যেই নিহিত। কিন্তু বিজেপি সরকার সেই বৈচিত্র্যকে সংকুচিত করে এক রকম ভাবনাকে চাপিয়ে দিতে চাইছে। তিনি বলেন, বহুত্ববাদকে রক্ষা করার একমাত্র পথ গণতন্ত্র। যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়, তবে ভারতের আত্মাটাই দুর্বল হয়ে পড়বে।
তরুণ প্রজন্মকে বার্তা
রাহুল গান্ধী বলেন, ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তরুণ প্রজন্মের হাতে। তাঁদের উচিত দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরা এবং ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা। কারণ, “গণতন্ত্র মানে কেবল ভোট দেওয়া নয়, বরং সমাজে প্রত্যেকের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া।”
মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করা, বিরোধীদের কণ্ঠস্বর চেপে দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন নষ্ট করার মতো অভিযোগ তিনি বারবার করে এসেছেন। কলম্বিয়ার মাটিতে এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও স্পষ্ট বার্তা দিলো যে, ভারতের অগ্রগতি কেবল গণতান্ত্রিক পথেই সম্ভব, কর্তৃত্ববাদী মডেল নকল করে নয়।