দেবী দুর্গার বিদায়ের দিন আজ। দশমীর সকালে সিঁদুর খেলা, অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পুজোর পর্ব শেষ হতেই শুরু হলো প্রতিমা বিসর্জনের পালা। প্রতিবছরের মতোই এই বছরও দেবীর নিরঞ্জন যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়, সেই লক্ষ্যে কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ও কলকাতা পুরসভা গ্রহণ করেছে একাধিক কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয়, যার মধ্যে অধিকাংশ প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বেছে নেওয়া হয় ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট।
ঘাটে ঘাটে নজিরবিহীন নিরাপত্তা
বুধবার নবমীর দুপুরেই পুর কমিশনার ধবল জৈন সমস্ত বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে বিসর্জন প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। বিসর্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জলপথ থেকে আকাশপথ— দুই দিকেই নজরদারির ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন:
আকাশ ও জলপথে নজরদারি: গঙ্গার জলে টহল দেবে রিভার ট্রাফিক পুলিশ। আকাশপথে নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন, পাশাপাশি বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা।
বিশেষ উদ্ধারকারী দল: জল পুলিশের দপ্তরে পাঁচজন প্রশিক্ষিত ডুবুরি-সহ একটি রেসকিউ টিম সদা প্রস্তুত। বাজে কদমতলা ঘাটে অতিরিক্ত ছয়জন ডুবুরি-সহ একটি বিশেষ লঞ্চ মোতায়েন করা হয়েছে।
জরুরি বাহিনী: বাগবাজার, গোয়ালিয়র, বাজে কদমতলা ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন থাকবে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (DMG)-এর বিশেষ বাহিনী। সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
পুলিশ পিকেট: শহরের ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবে পুলিশ পিকেট। প্রতিটি ঘাটে ইন্সপেক্টর পদের একজন আধিকারিকের নেতৃত্বে থাকবে পুলিশের টিম।
দুর্ঘটনা এড়াতে আগাম সতর্কতা
দুর্ঘটনা এড়াতে পুজো কমিটিগুলিকে আগাম সতর্ক করা হয়েছে। জোয়ারের সময় বিসর্জন না করার জন্য মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে এবং মোবাইল ফোনে পাঠানো হচ্ছে জোয়ার-ভাটার সময়সূচি। দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালাতে ডিসি কমব্যাটের নেতৃত্বে থাকবে বিশেষ উদ্ধারকারী দল।
পরিবেশ সুরক্ষায় জোর
গঙ্গার দূষণ আটকাতে প্রশাসন এবার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিটি ঘাটের দুই পাশে বাঁশের অস্থায়ী খাঁচা বসানো হয়েছে, যাতে কাঠামো সহজে নদী থেকে তুলে আনা যায়। ফুল, বেলপাতা এবং অন্যান্য উপচার আলাদা করে রাখার জন্য ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। নিমতলা, বাজে কদমতলা, গোয়ালিয়র ও বিচালিঘাটে থাকবে চারটি নৌকা, যার মাধ্যমে প্রতিমার কাঠামো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে।
সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে, কোনও পুজো কমিটি উচ্চস্বরে ডিজে বাজালে বা নিয়ম ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি আয়োজকদের গ্রেফতারও করা হতে পারে। কলকাতা পুরসভা ও পুলিশ প্রশাসনের লক্ষ্য একটাই— দুর্গা বিসর্জনের আনন্দ যেন কোনও দুর্ঘটনা বা বিশৃঙ্খলায় ম্লান না হয়।