বিজয় দশমীর সকালেই ফের একবার হিন্দু ধর্মের রীতিনীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইবার বিতর্কের কেন্দ্রে কালীঘাট মন্দির। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করে অভিযোগ করেছেন— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহে মা দক্ষিণা কালীর দিকে ‘এঁটো’ ছুঁড়েছেন!
শুভেন্দু অধিকারী তার ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে ‘কালীঘাটে কেলেঙ্কারি’ নামক একটি ভিডিও পোস্ট করে প্রশ্ন তোলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনি এটা কি করছেন? কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহে পুরোহিত আপনাকে মা দক্ষিণা কালীর চরণামৃত বা প্রসাদ কিছু একটা দিয়েছেন, যা আপনি মাথায় ছোঁয়ালেন, মুখেও গ্রহণ করলেন, দিয়ে সেটাই আবার মা-এর দিকে ছুঁড়ে দিলেন?”
কীসের ভিত্তিতে ‘অনাচারের’ অভিযোগ?
শুভেন্দুর বক্তব্য, প্রসাদ বা চরণামৃত মুখে নেওয়ার পর তা ‘এঁটো’ হয়ে যায়, এবং সেই এঁটো কোনওভাবেই দেবীর দিকে ছোঁড়া হিন্দু শাস্ত্র মতে ‘অনাচার’। এই কাজকে শুভেন্দু সরাসরি “হিন্দুদের বিশ্বাস ও আস্থার উপর আঘাত এবং শাস্ত্র বিরোধী” বলে কটাক্ষ করেছেন।
‘সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক’ নিয়ে ফের তোপ
শুধুমাত্র এই ঘটনাই নয়, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) অত্যন্ত সচেতনভাবে তাদের ‘৩০ শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক’ সুরক্ষিত রাখতে বারংবার হিন্দুদের বিশ্বাসে আঘাত করছেন। এর আগে দুর্গাপূজার মণ্ডপ উদ্বোধন থেকে শুরু করে মহাষ্টমীর দিন অঞ্জলির বদলে মাজার দর্শন, মাথায় কাপড় দিয়ে পুজো উদ্বোধন – সব ক্ষেত্রেই মমতার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিল গেরুয়া শিবির।
শুভেন্দু অধিকারী তার পোস্টে আরও লেখেন, “আমাদের আরাধ্য দেবদেবীকেও এনারা ছাড়ছেন না। এর আগে ওনারই দলের এক সাংসদ মা কালী সম্পর্কে কটুক্তি করেছিলেন।” তিনি সতর্ক করে লেখেন, “কালীঘাট মন্দিরে পুজিতা মা দক্ষিণা কালী অত্যন্ত জাগ্রত বলেই আমাদের বিশ্বাস, নিশ্চিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাপাধ্যায় আপনাকে এর ফল ভোগ করতেই হবে।” তার মতে, এই ঘটনা মমতার হিন্দু রীতি-নীতি বিষয়ে ‘অজ্ঞতা’ আবারও প্রকাশ্যে আনল।
শাসকদলের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই বিজেপির এই ধরনের অভিযোগকে ‘বিভেদের রাজনীতি’ বলে পাল্টা তোপ দেগেছে। যদিও বিজয়া দশমীর দিনে শুভেন্দু অধিকারীর এই বিস্ফোরক ভিডিও ও বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শাসকদলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মতো নেতারা এর আগে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মূল উদ্দেশ্যই হলো ধর্মীয় মেরুকরণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।