প্রাচীনকাল থেকে তামার পাত্রে জল সংরক্ষণ করার প্রচলন ছিল, যা মূলত জলকে দূষণমুক্ত ও বিশুদ্ধ রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। আধুনিক সময়ে ফিল্টার ও পিউরিফায়ার ব্যবহারের ফলে আমরা এই পদ্ধতিকে ভুলতে বসেছি।
তবে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, তামার পাত্রে জল সংরক্ষণ শুধু প্রাচীন পদ্ধতি নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এই প্রক্রিয়ায় জল জীবাণুমুক্ত হয় এবং এতে তামার উপকারী গুণাগুণ মিশে যায়।
তামার পাত্রে জল সংরক্ষণ করলে কী হয়?
✔ জীবাণুমুক্ত ও বিশুদ্ধ জল: তামার পাত্রে জল রাখলে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংস হয়, ফলে এটি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ হয়ে ওঠে।
✔ প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান: তামা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিনারেল যা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। সামুদ্রিক খাবার, বাদাম, ডাল, শস্যদানা, চকলেট, আলু ও সবুজ শাকসবজি তামার ভালো উৎস। তবে তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল পান করেও এটি সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
তামার পাত্রের জল পানের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
🔹 পরিপাকক্রিয়া উন্নত করে:
তামা পাকস্থলির ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে, প্রদাহ কমায় এবং বদহজম, আলসার ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং লিভার ও কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে।
🔹 ওজন কমাতে সাহায্য করে:
তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল শরীরের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর।
🔹 ক্ষত সারিয়ে তোলে:
তামা শরীরের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে।
🔹 বয়সের ছাপ কমায়:
তামার জল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বকের বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
🔹 হৃদরোগ প্রতিরোধ করে:
তামা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এটি হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
🔹 ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে:
তামা ই.কোলাই ও এস.অরিয়াস নামের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
🔹 থাইরয়েড গ্ল্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করে:
বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েডের সমস্যার অন্যতম কারণ হলো শরীরে তামার ঘাটতি। এটি থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে।
🔹 হাড়ের ব্যথা কমায়:
তামা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ, যা আর্থ্রাইটিস ও জয়েন্ট পেইন দূর করতে সহায়ক। এটি হাড়কে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।
🔹 ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে:
তামা মেলানিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা চুল, চোখ ও ত্বকের রং ঠিক রাখে। এটি নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে, ফলে ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হয়।
🔹 রক্তস্বল্পতা দূর করে:
তামা শরীরে আয়রন শোষণ বাড়ায়, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
✅ তাই সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিন তামার পাত্রে সংরক্ষিত জল পান করুন এবং প্রাকৃতিক উপায়ে শরীরকে সুস্থ রাখুন!