ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। এছাড়াও কিছু খাবারেও এই ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে অনেক সময় পর্যাপ্ত সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যথেষ্ট নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়াই ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শরীরে নানা সমস্যা বাড়তে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে বিষাক্ততার লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শরীরে ভিটামিন ডি উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল। সূর্যের আলোর অদৃশ্য অতিবেগুনী বি (UVB) রশ্মি যখন ত্বক দ্বারা শোষিত হয়, তখন এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর লিভার ও কিডনির মতো অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং ভিটামিনটিকে এমন একটি রূপে রূপান্তরিত করে যা শরীর ব্যবহার করতে পারে।
শরীরে ভিটামিন ডি-এর শোষণ ক্ষমতাও বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। এটি একটি চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায়, খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত চর্বি থাকলে রক্তপ্রবাহে এটি ভালোভাবে শোষিত হয়। হার্ভার্ড হেলথের মতে, পেটের রস, অগ্ন্যাশয় নিঃসরণ, লিভার থেকে পিত্ত এবং অন্ত্রের প্রাচীরের স্বাস্থ্য – এই বিষয়গুলিও ভিটামিন ডি কতটা শোষিত হবে তার উপর প্রভাব ফেলে। শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেই লক্ষণগুলি:
১. হাড় ও জয়েন্টে ব্যথা: আপনার হাড় ও পেশীর অবস্থা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি আছে কিনা তা নির্দেশ করতে পারে। এই প্রয়োজনীয় ভিটামিনের মাত্রা কম থাকলে শরীর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সম্পূর্ণরূপে শোষণ করতে পারে না, যা হাড়ের দুর্বলতা বাড়ায়। এর ফলে হাড়ে ব্যথা, হাড় ভাঙা, পেশীতে ব্যথা এবং পেশী দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ইয়েল মেডিসিনের মতে, ঘাটতি গুরুতর হলে বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড়ের ভঙ্গুরতার ঝুঁকি বাড়ে।
২. পেশী দুর্বলতা এবং খিঁচুনি: ভিটামিন ডি স্বাভাবিক পেশী কার্যকলাপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশীতে দুর্বলতা বা ব্যথা অনুভব করলে, এটি কম ভিটামিন ডি-এর একটি স্পষ্ট লক্ষণ হতে পারে। বোন রিপোর্টের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিযুক্ত দুর্বল বয়স্ক ব্যক্তিরা, বিশেষ করে যারা রোদে কম থাকেন, তারা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট থেকে উপকার পেতে পারেন।
৩. দাঁতের সমস্যা: ঘন ঘন দাঁতের ক্ষয় এবং দুর্বল দাঁতের স্বাস্থ্য ভিটামিন ডি-এর অভাবের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মুখের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে এবং এটি দাঁতের ত্রুটি, ক্যারিজ, পিরিয়ডোনটাইটিস এবং মুখের অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. চুল পড়া: ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি কেরাটিনোসাইটের সঙ্গে যুক্ত, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোষ। ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে এই কোষগুলির অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে চুল পড়তে শুরু করতে পারে।
৫. ক্লান্তি: পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরেও যদি ক্লান্তি না কমে, তবে এটি ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে হতে পারে। শরীরে ভিটামিন ডি-এর পর্যাপ্ত মাত্রা না থাকলে মেজাজ পরিবর্তন, অলসতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে।
৬. ক্ষুধা কমে যাওয়া: যদি আপনার ক্ষুধা কমে যায়, তবে এর জন্য ভিটামিন ডি-এর অভাব দায়ী হতে পারে। দ্য জার্নাল অফ স্টেরয়েড বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ভিটামিন ডি লেপটিন নিয়ন্ত্রণে জড়িত, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন।
যদি আপনি এই লক্ষণগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিজে থেকে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় ওষুধ সেবন করা উচিত। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।