ওজন কমাতে খাচ্ছেন আপেল সিডার ভিনেগার? এর ফল কি হচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তো?

আপেল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar বা ACV) স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কিছু নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলে আসছে। বহু যুগ ধরে খাবারের উপকরণ হিসেবে এর ব্যবহার থাকলেও, সাম্প্রতিককালে ওজন কমানো বা সাধারণভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তবে, সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এর ভালো ও মন্দ উভয় দিকেরই ইঙ্গিত দিয়েছে।

আপেল সিডার ভিনেগার কী?

আপেল সিডার ভিনেগার মূলত আপেল, ইস্ট ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এতে প্রায় ৫ শতাংশ অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে। এটিকে দুর্বল অ্যাসিড হিসেবে ধরা হলেও, ঘনত্ব বাড়লে এটি শক্তিশালী অ্যাসিডের মতো কাজ করতে পারে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত – এই দুই ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার বাজারে পাওয়া যায়। যদিও এর খুব বেশি উপকারিতার জোরালো প্রমাণ মেলেনি, তবুও সাধারণভাবে এটিকে অক্ষতিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

(ভালো দিক)

হজমের উন্নতি: আপেল সিডার ভিনেগার হজমে সহায়ক হতে পারে। এটি পেটের অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে খাদ্য হজম করতে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি মানবদেহের মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকেও গতিময় করতে পারে।
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ: কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার ফলে খাবারের পরে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে এটি ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়।
কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক: কিছু প্রমাণ মিলেছে যে, এটি ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে এবং খারাপ কোলেস্টেরল, বিশেষত ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সামান্য ভূমিকা রাখতে পারে।
খাবারের জীবাণু ধ্বংস: বাজারের কাঁচা সবজি আপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত জলে কমপক্ষে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ক্ষতিকর জীবাণু মারা যেতে পারে।
ত্বকের যত্নে: এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে, ব্রণ কমাতে এবং স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করতে পারে। চুলের যত্নেও এর কিছু ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করা হয়, যদিও এর স্বপক্ষে জোরালো গবেষণাভিত্তিক প্রমাণ কম।
(মন্দ দিক)

পেটে জ্বালাপোড়া: অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে পেটে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
দাঁতের ক্ষতি: এটি অ্যাসিডিক হওয়ায় সরাসরি খেলে দাঁতের এনামেলের ক্ষয় হতে পারে।
পেটের সমস্যা: উচ্চমাত্রায় সেবন করলে ডায়রিয়া বা পেট খারাপের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, পেট ফাঁপা, ক্ষুধামান্দ্য এবং বমি বমি ভাবের মতো উপসর্গও দেখা যেতে পারে।
রক্তচাপ এবং ওষুধের প্রভাব: এটি কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের (যেমন ডায়াবেটিস বা রক্তচাপের ওষুধ) কার্যকারিতা প্রভাবিত করতে পারে এবং হাড়ক্ষয় রোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
পটাশিয়ামের মাত্রা কমানো: বেশি পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
কীভাবে গ্রহণ করবেন:

সাধারণত, দিনে ১-২ টেবিল চামচ (১৫-৩০ মি.লি.) যথেষ্ট। এটিকে অবশ্যই জলের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা উচিত, কারণ সরাসরি খেলে গলা এবং দাঁতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খালি পেটে খাওয়ার পরিবর্তে খাবারের সঙ্গে বা পরে সেবন করা ভালো। অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে এটি দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয় করতে পারে।

কারা একেবারেই খাবেন না:

যারা ডাইউরেটিক্স, লাক্সেটিভস, ডিগোক্সিন বা ইনসুলিনের মতো বিভিন্ন ওষুধ সেবন করেন, তাদের আপেল সিডার ভিনেগার থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, এই ভিনেগার এসব ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

আপেল সিডার ভিনেগার নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, তার বেশিরভাগই পশুদের উপর করা হয়েছে। মানবদেহের উপর এর বিস্তারিত প্রভাব নিয়ে তেমন গবেষণা এখনও পর্যন্ত হয়নি। তাই, আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy