ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জন্মাষ্টমী। এই উৎসবকে কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী এবং শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী নামেও অভিহিত করা হয়। মথুরা, বৃন্দাবন, নবদ্বীপ ও দেশের অন্যান্য স্থানে এই উৎসব উপলক্ষে মহা সমারোহে প্রস্তুতি চলছে প্রায় এক মাস ধরে।
পৌরাণিক মতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ও রোহিণী নক্ষত্রে কংসের কারাগারে বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রতি বছর এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণের ছোটবেলার রূপ, অর্থাৎ ননীগোপালের পূজা করা হয়। এই বছর জন্মাষ্টমী পড়েছে ১৬ই অগাস্ট এবং নন্দোৎসব ১৭ই অগাস্ট। অষ্টমী তিথি ১৫ই অগাস্ট রাত ১টা ১৬ মিনিট থেকে শুরু হয়ে ১৬ই অগাস্ট রাত ১০টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বী, বিশেষত বৈষ্ণবদের কাছে এই উৎসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মাষ্টমী উদযাপনের বিভিন্ন রীতির মধ্যে রয়েছে রাসলীলা, যা শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালের লীলা অবলম্বনে নৃত্য ও নাটকের মাধ্যমে পরিবেশিত হয়। এছাড়াও মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের মুহূর্তে ধর্মীয় গান গাওয়া, উপবাস করা এবং ‘দহি হান্ডি’ প্রথা পালন করা হয়। ‘দহি হান্ডি’-তে উঁচুতে ঝোলানো মাখনের হাঁড়ি ভাঙার জন্য ভক্তরা মানুষের পিরামিড তৈরি করে। তামিলনাড়ুতে এই প্রথা ‘উড়িয়াদি’ নামে পরিচিত।
জন্মাষ্টমীর দিন মধ্যরাতে শ্রীকৃষ্ণের ছোট মূর্তিকে স্নান করিয়ে সাজানো হয়। এরপর ভক্তরা প্রসাদ গ্রহণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন। অনেক বাড়িতে শ্রীকৃষ্ণের পদচিহ্ন এঁকে আলপনা দেওয়া হয়, যা শ্রীকৃষ্ণের ঘরে আসার প্রতীক।
নন্দোৎসব
জন্মাষ্টমীর পরের দিন, অর্থাৎ ১৭ই অগাস্ট পালিত হবে নন্দোৎসব। এটি শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ মহারাজের তার পুত্রের জন্ম উপলক্ষে আনন্দ উদযাপন। এটি ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে ভক্তরা নন্দ মহারাজ এবং শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে এবং তাদের প্রতি ভক্তি নিবেদন করেন। নন্দোৎসবের মূল বার্তা হলো আনন্দ, প্রেম এবং ভক্তি। বৃন্দাবনের সংস্কৃতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। অনেক বাড়িতে জন্মাষ্টমীর চেয়েও বড় করে নন্দোৎসব পালন করা হয়। এই বিশেষ দিনে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় খাবারগুলো ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। ভোগের তালিকায় থাকে তালের বড়া, তালের ক্ষীর, মাখন, মিছরি, লুচি-সুজি এবং বিভিন্ন নিরামিষ পদ।