উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে ভোটার তালিকার একটি বিশেষ অংশ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি নির্দিষ্ট ঠিকানায় বসবাসকারী ৫০ জনেরও বেশি ভোটারের বাবার নাম ‘রামকমল দাস’। এই অস্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তবে আজতকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই ঘটনার পেছনের আসল সত্য। এটি কোনো জালিয়াতি নয়, বরং একটি প্রাচীন ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ।
ভাইরাল হওয়া ভোটার তালিকাটি ২০২৩ সালের পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনের। এতে বারাণসীর কাশ্মীরিগঞ্জের একটি ঠিকানায় (বি ২৪/১৯) ৫০ জনেরও বেশি ভোটারের নাম নথিভুক্ত রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, তাদের সকলেরই বাবার নাম ‘রামকমল দাস’। সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ২৮ এবং বড়টির বয়স ৭২ বছর। এই পরিসংখ্যান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
এই ঘটনায় ইউপি কংগ্রেস তাদের অফিসিয়াল ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে লিখেছিল, “বারাণসীতে নির্বাচন কমিশনের আরেকটি অলৌকিক ঘটনা দেখুন! ভোটার তালিকায় ‘রামকমল দাস’ নামে এক ব্যক্তির ৫০ জন ছেলে! এটি প্রকাশ্যে জালিয়াতি।” কংগ্রেসের এই অভিযোগের পর বিষয়টি আরও বেশি আলোচিত হয়।
তবে সংবাদ মাধ্যম আজতক যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, তখন দেখা যায় যে বি ২৪/১৯ ঠিকানাটি কোনো সাধারণ বাড়ি নয়, বরং এটি ‘রাম জানকী মঠ মন্দির’। মঠের ব্যবস্থাপক রামভারত শাস্ত্রী জানান, এই মঠটি আচার্য রামকমল দাস জি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে গুরু-শিষ্য পরম্পরা প্রচলিত, যেখানে সন্ন্যাসী বা পার্থিব জীবন ত্যাগকারী শিষ্যরা তাদের গুরুকেই নিজেদের পিতা হিসেবে গণ্য করেন।
মঠের প্রবীণ শিষ্য অভিরাম বলেন, এটি কোনো মনগড়া প্রথা নয়, বরং আইনত বৈধ। ২০১৬ সালে ভারত সরকার এক নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে, সন্ন্যাসী জীবন গ্রহণকারী সাধু-সন্তরা তাদের সরকারি নথিতে পিতার নামের পরিবর্তে গুরুর নাম লিখতে পারবেন। এটি তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা পারিবারিক জীবন ত্যাগ করেছেন।
সাধু সমাজের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। অখিল ভারত সন্ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বামী জিতেন্দ্রানন্দ সরস্বতী বলেন, এটি একটি সনাতন ঐতিহ্য। কংগ্রেস এই তথ্য সম্পর্কে না জেনে হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের বদনাম করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রথা শুধু কাশীতে নয়, সারা ভারতেই প্রচলিত।
সুতরাং, বারাণসীর ভোটার তালিকার এই ঘটনাটি কোনো জালিয়াতি বা ত্রুটি নয়, বরং গুরু-শিষ্যের পবিত্র সম্পর্কের একটি প্রতীক, যা শতাব্দী ধরে ভারতীয় সন্ন্যাসী ঐতিহ্যের অংশ। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সৃষ্টি হলেও, অনুসন্ধানে এর ধর্মীয় ও আইনি বৈধতা প্রমাণিত হয়েছে।