ব্রেন টিউমার শব্দটি শুনলেই মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এটি এমন একটি রোগ যা জীবননাশের কারণ হতে পারে। মস্তিষ্কের ভেতরে সৃষ্ট হওয়া টিউমার ক্যানসারাস (মারাত্মক) বা নন-ক্যানসারাস (নিরীহ) হতে পারে। এই টিউমার শুধুমাত্র মস্তিষ্কেই তৈরি হতে পারে কিংবা শরীরের অন্য অংশ থেকে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ব্রেন টিউমারের ধরণ ও চিকিৎসা
ব্রেন টিউমারের ধরন, বৃদ্ধি পাওয়ার গতি, মস্তিষ্কের কোন অংশে অবস্থান করছে এবং স্নায়ুর কতটা ক্ষতি করেছে—এসব বিবেচনা করে চিকিৎসকরা চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করা যায়, তবে এটি নিরাময়যোগ্য হতে পারে। কিন্তু যদি ক্যানসার মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি রোগীর মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
তাই ব্রেন টিউমারের কিছু লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তবে লক্ষণগুলো ব্যক্তি ও টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
ব্রেন টিউমারের অন্যতম সাধারণ দুটি লক্ষণ হলো:
অতিরিক্ত মাথাব্যথা
মাথায় অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা ও নিজেকে অসুস্থ মনে হওয়া
অনেকেই এই ধরনের মাথাব্যথাকে সাধারণ মাথাব্যথা ভেবে অবহেলা করেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবন করেন। তবে এটি মারাত্মক হতে পারে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্যমতে, ব্রেন টিউমারের কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথা সাধারণ মাথাব্যথার তুলনায় অনেক বেশি তীব্র ও যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং প্রতিদিনই হতে পারে। তাই এটি অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অন্যান্য লক্ষণসমূহ
চোখে ঝাপসা দেখা
মুখের স্বাদ চলে যাওয়া
শরীর কাঁপুনি দেওয়া
মৃগীরোগ (এপিলেপ্সি) দেখা দেওয়া
শরীরের একদিক অবশ হয়ে যাওয়া
ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া
মনোযোগ কমে যাওয়া বা চিন্তাভাবনায় সমস্যা হওয়া
ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন আসা
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি কার বেশি?
বয়স: ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়।
ব্রেন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা রেডিওথেরাপির অতিরিক্ত ব্যবহার ঝুঁকি বাড়ায়।
জিনগত রোগ (যেমন স্কেলেরোসিস, নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস টাইপ ১ ও ২) থাকলে।
পরিবারে কেউ ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হলে উত্তরাধিকার সূত্রে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
পুরুষদের মধ্যে নারীদের তুলনায় এ রোগের হার বেশি দেখা যায়।
মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস: সচেতনতার বার্তা
আজ ৮ জুন, বিশ্ব ব্রেন টিউমার দিবস। প্রতি বছর এই দিনটি বিশ্বব্যাপী ব্রেন টিউমার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পালিত হয়।
ক্যানসারডটনেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩ লাখ ৮ হাজার ১০২ জনের প্রাথমিক মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডের টিউমার শনাক্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২০ সালে ব্রেন টিউমারের কারণে বিশ্বব্যাপী ২ লাখ ৫১ হাজার ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমতে, ক্যানসারযুক্ত ব্রেন টিউমার আক্রান্তদের মধ্যে ৬ বছরের বেঁচে থাকার হার প্রায় ৩৬%, আর ১০ বছরের বেঁচে থাকার হার প্রায় ৩১%।
সতর্ক থাকুন, সময়মতো চিকিৎসা নিন
ব্রেন টিউমার মারাত্মক হলেও, সময়মতো চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।