“বিহারের মতো পদ্ধতি বাতিলের দাবি”-ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তৃণমূল

নির্বাচন কমিশনের ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (SIR) বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া নিয়ে এবার সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এই মামলাটি দায়ের করেছেন, যেখানে বিহারের মতো একতরফাভাবে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতির বিরুদ্ধে আর্জি জানানো হয়েছে।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বর্ষীয়ান সাংসদ এবং আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করেন। তিনি আদালতে যুক্তি দেন যে, এই মামলার মূল বিষয় পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকার সংশোধন হলেও, বিহারে যে পদ্ধতিতে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আদালতও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘সার’ সংক্রান্ত মূল মামলার সঙ্গে এই মামলাটিকে ট্যাগ করার নির্দেশ দেয়। ফলে আজ, মঙ্গলবার মূল মামলার সঙ্গেই তৃণমূলের দায়ের করা মামলাটিরও শুনানি হবে।

আদালতের বাইরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন জন্মের শংসাপত্র চাইছে, এটা সাধারণ মানুষ কোথায় পাবে? অনেকেরই তো জন্মের শংসাপত্র নেই। কমিশন ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড কেন গ্রহণ করছে না?” তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশন তাদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে এবং কে স্বদেশী আর কে বিদেশী, তা নির্ধারণের চেষ্টা করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হওয়া ভোটার কার্ড এবং নতুন রেশন কার্ডকে কমিশন কীভাবে মানতে পারে না, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।

গত সপ্তাহে ‘সার’ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বিহারের ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম একলপ্তে বাদ দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এরপর কমিশন একটি হলফনামা দিয়ে জানায়, নতুন করে আবেদনকারীদের নাম বাদ দেওয়ার আগে নোটিস দেওয়া হবে এবং ন্যায়বিচারের নীতি মেনে তাদের বক্তব্য শোনার সুযোগ দেওয়া হবে। এখন দেখার বিষয়, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কী নির্দেশ দেয়।

রাজনৈতিক মহলের মতে, ‘সার’ ইস্যুতে বিরোধী দলগুলো একজোট হওয়ায় কেন্দ্র কিছুটা চিন্তায় রয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলের একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, এনডিএ-র অনেক সাংসদ ব্যক্তিগতভাবে তাদের এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন, কিন্তু প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ তারা আশঙ্কা করছেন যে মহারাষ্ট্রের মতো তাদের দলেও ভাঙন ধরানো হতে পারে। এই ঘটনাটি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy