বাংলাদেশ থেকে এনে মহিলাদের দেহব্যবসার কাজে বাধ্য করার অভিযোগ, ফাঁস বড় পাচার চক্র

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে মহিলাদের অবৈধভাবে ভারতে এনে দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে হায়দরাবাদ পুলিশ একটি বড় আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের পর্দাফাঁস করেছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম হাজেরা বেগম, শাহনাজ ফাতিমা এবং মহম্মদ সমীর।

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গত ৮ই আগস্ট, যখন এক নির্যাতিতা মহিলা বান্দলাগুদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি পুলিশকে জানান যে প্রায় ছয় মাস ধরে তিনি এই পাচারচক্রের শিকার হয়েছেন। ওই মহিলার ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার প্রতিবেশী রূপা তাকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেন। এরপর গভীর রাতে নৌকা করে তাকে অবৈধভাবে সীমান্ত পার করানো হয়। প্রথমে তাকে কলকাতায় আনা হয় এবং সেখান থেকে ট্রেনে করে হায়দরাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়।

হায়দরাবাদে পৌঁছানোর পর তাকে শাহনাজ ফাতিমার হাতে তুলে দেওয়া হয়, যিনি পরে তাকে হাজেরা বেগমের কাছে পাঠান। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে চাকরির নাম করে তাকে আসলে দেহব্যবসার জন্য আনা হয়েছে। ভারতে থাকার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাকে অবৈধভাবে দেশে থাকার ভয় দেখানো হয় এবং জোর করে বিভিন্ন হোটেল ও বাড়িতে ‘কাজের’ জন্য পাঠানো হতে থাকে।

সাহস করে পুলিশের দ্বারস্থ

দীর্ঘদিন ধরে এই অমানবিক অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর অবশেষে ওই মহিলা সাহসের সঙ্গে এর প্রতিবাদ জানান। একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি সুযোগ বুঝে মহম্মদ সামিরের গাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং সরাসরি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

পুলিশের অনুসন্ধানে মেহদিপট্টনমে শাহনাজ ফাতিমার ভাড়া বাড়িতে অভিযান চালানো হয় এবং সেখান থেকে আরও তিন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই বাড়িটি ব্যবহৃত হতো পাচার করে আনা মহিলাদের আটকে রাখার জন্য।

মূল অভিযুক্তরা পলাতক, চলছে তল্লাশি

এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন অভিযুক্ত— হাজেরা বেগম, শাহনাজ ফাতিমা এবং মহম্মদ সমীরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদিকে, নির্যাতিতা তরুণীদের একটি রেসকিউ হোমে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের মূল হোতা, দুই পলাতক রূপা এবং সরোয়ারকে ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশের দাবি, এই মানবপাচার চক্রের জাল শুধু হায়দরাবাদেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর বড় মাথা পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে। এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মেয়েদের ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে দেহব্যবসায় নামানো। পুলিশ এখন এই মূলচক্রীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy