ভারতের কর কাঠামোকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং আধুনিক করার লক্ষ্যে আজ লোকসভায় নতুন আয়কর বিল, ২০২৫ পেশ করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এই বিলটি পেশ করবেন, যা ৬৩ বছরের পুরনো আয়কর আইন, ১৯৬১-এর স্থলাভিষিক্ত হবে। বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পান্ডার নেতৃত্বে গঠিত সিলেক্ট কমিটির সুপারিশ করা ২৮৫টি সংশোধনী এই নতুন বিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিল পেশে বিলম্ব ও সংশোধনের কারণ
কেন্দ্রীয় সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এই বিল পেশে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, যখন কোনো সংসদীয় কমিটি একটি বিল নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব করে এবং সেগুলো গৃহীত হয়, তখন মূল বিল প্রত্যাহার করে একটি সংশোধিত সংস্করণ পেশ করাই আদর্শ পদ্ধতি। তিনি জানান, নতুন বিলে ২৮৫টিরও বেশি পরিবর্তন সুপারিশ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩২টি প্রধান পরিবর্তনও রয়েছে। প্রতিটি সংশোধনের জন্য একাধিক পৃথক প্রস্তাবের প্রয়োজন হয়, তাই সময় সাশ্রয়, আইনি স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা নিশ্চিত করতে মূল বিলটি প্রত্যাহার করে এই নতুন বিলটি পেশ করা হচ্ছে।
সহজ ভাষা এবং কম ধারা
নতুন আয়কর বিল, ২০২৫-এর প্রধান লক্ষ্য হলো আইনটিকে সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য করে তোলা এবং মামলা-মোকদ্দমা কমানো। এটি ১৯৬১ সালের আইনের তুলনায় অনেক সহজ ভাষায় রচিত। নতুন বিলে ৮১৬টির পরিবর্তে মাত্র ৫৩৬টি ধারা এবং ৪৭টির পরিবর্তে ২৩টি অধ্যায় রয়েছে। বর্তমানে ৫.১২ লক্ষ শব্দ ব্যবহৃত হয়, যা নতুন বিলে ২.৬ লক্ষ শব্দে নেমে আসবে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনসমূহ:
এই নতুন বিলে বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো:
১. ধর্মীয় ট্রাস্টের বেনামী অনুদান: নতুন বিধান অনুযায়ী, সামাজিক পরিষেবা প্রদানকারী ট্রাস্ট ছাড়া অন্য সম্পূর্ণ ধর্মীয় ট্রাস্টগুলোর বেনামী অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোরতা আনা হবে।
২. TDS রিফান্ড: আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও করদাতারা কোনো জরিমানা ছাড়াই TDS রিফান্ডের দাবি করতে পারবেন।
৩. ‘কর বছর’ (Tax Year) ধারণা: এখন থেকে ‘মূল্যায়ন বছর’ এবং ‘পূর্ববর্তী বছর’-এর পরিবর্তে একটি সমন্বিত ‘কর বছর’ (Tax Year) ধারণাটি চালু করা হবে। বর্তমানে, এক বছর আয় করলে পরের বছর তার উপর কর ধার্য করা হয়। নতুন বিল এই পদ্ধতিকে আরও সরল করবে।
৪. বিধি ও স্পষ্টীকরণ অপসারণ: নতুন বিল থেকে প্রায় ১,২০০টি অপ্রয়োজনীয় বিধান এবং ৯০০টি স্পষ্টীকরণ অপসারণ করা হয়েছে, যা আইনটিকে আরও সংক্ষিপ্ত ও কার্যকরী করে তুলবে।
এই বিলটি ভারতীয় কর ব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে করদাতাদের জন্য আয়কর সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হবে।