পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চন্দননগরের বোসপাড়া এলাকার বসু পরিবারের রাশিয়ান পুত্রবধূ ভিক্টোরিয়া ঝিগালিনার বিরুদ্ধে এবার ইন্টারপোল ব্লু কর্নার নোটিস জারি করেছে। ছেলে স্ট্যাভিওকে নিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ব্লু কর্নার নোটিসের মাধ্যমে কোনো অপরাধীকে চিহ্নিত করা, তার অবস্থান জানা এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সদস্য দেশগুলোকে সহায়তা করা হয়।
চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত বসু একসময় চীনে চাকরি করতেন, সেখানেই তার সঙ্গে ভিক্টোরিয়ার পরিচয় হয়। ২০১৭ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৯ সালে সৈকত ভারতে ফিরে আসেন এবং ভারত সরকারের এমএসএমই মন্ত্রকের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দিল্লিতে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালে তাদের ছেলে স্ট্যাভিওর জন্ম হয়।
সৈকতের বাবা এবং ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন কর্মকর্তা সমীর বসু অভিযোগ করেছেন যে, ভিক্টোরিয়ার বাবা রাশিয়ান স্পাই এজেন্সি এফএসবি-তে কাজ করতেন এবং তিনি সন্দেহ করেন যে ভিক্টোরিয়া নিজেও একজন রুশ গুপ্তচর। তার অভিযোগ, কলকাতায় এলে ভিক্টোরিয়া প্রায়শই ভারতীয় সেনার পূর্ব হাইকমান্ড সদর দপ্তরে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতেন।
সৈকত এবং ভিক্টোরিয়া বর্তমানে আলাদা থাকতেন এবং আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের ছেলে যৌথভাবে বাবা-মায়ের কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ৭ জুলাই ভিক্টোরিয়া ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে যান। এরপর সৈকত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
সুপ্রিম কোর্ট ভিক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছিল, যাতে তিনি কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে যেতে না পারেন। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতকে জানায় যে, ভিক্টোরিয়া ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কেন্দ্রের মতে, তিনি ট্যাক্সিতে দিল্লি থেকে বিহার, সেখান থেকে নেপাল এবং পরে বিমানে করে শারজা হয়ে সম্ভবত মস্কোতে চলে গেছেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট মস্কোতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
এই ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আদালত জানায়, ভিক্টোরিয়া ও তার ছেলের ওপর কড়া নজর রাখার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হলেও দিল্লি পুলিশ তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ভিক্টোরিয়া দেশ ছাড়তে সক্ষম হন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২২ আগস্ট ধার্য করা হয়েছে।