পহেলগাঁও হামলার ঘটনার পর পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর “অপারেশন সিঁদুর” নামের এক কঠোর পদক্ষেপের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সম্প্রতি তিনি জানান, ২২ এপ্রিলের হামলার পরপরই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর নেতৃত্বে এক উচ্চপর্যায়ের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পাকিস্তানকে কড়া জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বৈঠকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন এবং সেনাদের হাতে চূড়ান্ত স্বাধীনতা দেওয়া হয়, যা সামরিক ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
রাজনৈতিক সমর্থন এবং রণনীতির পরিকল্পনা
জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ২৩ এপ্রিলের বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধানরা একমত হন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্পষ্ট ভাষায় তাঁদের বলেন, “অনেক হয়েছে, আর নয়।” সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এই পূর্ণ স্বাধীনতা এবং স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পেয়েই সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরিকল্পনা করে। সেনাপ্রধান জানান, এই ধরনের রাজনৈতিক সমর্থনের ফলেই মাঠপর্যায়ে কমান্ডাররা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২৫ এপ্রিল তিন বাহিনীর প্রধানরা নর্দান কমান্ডে পৌঁছন এবং সেখানে এই অপারেশনের রণনীতি তৈরি হয়। ৯ মে এই অপারেশনের ফলে ৭টি টার্গেট ধ্বংস করা হয় এবং বহু জঙ্গিকে নির্মূল করা হয়।
“অপারেশন সিঁদুর” – এক আবেগ এবং রণনীতির সংমিশ্রণ
অপারেশনের নামকরণের প্রসঙ্গে জেনারেল দ্বিবেদী একটি কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা তুলে ধরেন। ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম বৈঠকের সময় তিনি প্রথমবার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটি শোনেন। প্রথমে তিনি এটিকে সিন্ধু নদের সঙ্গে সম্পর্কিত ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, এটি আসলে ‘সিঁদুর’। এই নামটি দেশের মানুষের মধ্যে গভীর আবেগ তৈরি করে এবং অভিযানটি এক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন, “আমরা জওয়ানদের বলেছিলাম, এখন থেকে মা-বোনেরা যখন সিঁদুর পরবেন, তখন দেশের সেনাদের কথা স্মরণ করবেন।” এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি অপারেশনটির সঙ্গে দেশের নারীশক্তির প্রতি শ্রদ্ধার এক অনন্য সংযোগ স্থাপন করেন।
দাবার চাল এবং “গ্রে জোন” কৌশল
আইআইটি মাদ্রাজে এক অনুষ্ঠানে জেনারেল দ্বিবেদী এই অপারেশনকে একটি দাবার খেলার সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, প্রচলিত যুদ্ধের কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে “গ্রে জোন” কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। এই কৌশলে শত্রুপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও প্রতিটি ডোমেনে সুপরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি প্রচলিত যুদ্ধের মতো পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিবর্তে, এমন এক পদ্ধতি যেখানে সেনাও দাবার চাল চালছিল এবং শত্রুপক্ষও। তিনি বলেন, “আমরা কখনো চেকমেট দিচ্ছিলাম আবার কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়ছিলাম।”
জনমত এবং সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা
জেনারেল দ্বিবেদী “ন্যারেটিভ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম” বা জনমত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আসল জয় হয় মানুষের মনস্তত্ত্বে। পাকিস্তানের মতো দেশগুলো কীভাবে প্রচারের মাধ্যমে নিজেদের পরাজয়কেও জয় হিসেবে তুলে ধরে, তার উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝান।
“অপারেশন সিঁদুর”-এর সময় সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে কীভাবে জনমতকে প্রভাবিত করা হয়েছিল, তা তিনি ব্যাখ্যা করেন। “ন্যায়বিচার পাওয়া গিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর।” – এই বার্তাটি মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। একটি সাধারণ বার্তা কীভাবে জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করতে পারে, তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।