উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ দুর্গাপূজা (Durga Puja) আবারও সমাগত। নতুন ক্যালেন্ডার হাতে পেলেই বাঙালি যে দিনগুলির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, তার মধ্যে দুর্গাপূজা অন্যতম। শুধু কলকাতা নয়, সারা বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা এই উৎসবকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করে। এই উৎসবের মূল বার্তা হলো অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভশক্তির বিজয়, যা দেবী দুর্গা কর্তৃক মহিষাসুর বধের কাহিনীর মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়।
দুর্গাপূজার পরিকল্পনার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বেলুড় মঠের পূজা। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ এই মঠে প্রথম দুর্গাপূজা শুরু করেন, যা নারীশক্তির পবিত্রতা ও মাতৃত্বের দেবত্বের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক। সাধারণত জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে বেলুড় মঠের দুর্গাপূজার প্রস্তুতি শুরু হয়।
২০২৫ সালের বেলুড় মঠের দুর্গাপূজার নির্ঘণ্ট (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে):
এই বছর ১২, ১৩ ও ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ অর্থাৎ ২৯শে সেপ্টেম্বর, ৩০শে সেপ্টেম্বর ও ১লা অক্টোবর দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বছরের পূজা সরাসরি ইউটিউবে সম্প্রচার করা হবে, যাতে দেশ-বিদেশের ভক্তরা সহজেই পূজায় অংশ নিতে পারেন।
মহাসপ্তমী (২৯শে সেপ্টেম্বর, সোমবার):
- পূজারম্ভ: সকাল ৫:৪০ মিনিট থেকে।
মহাষ্টমী (৩০শে সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার):
- পূজারম্ভ: সকাল ৫:৪০ মিনিট থেকে।
- কুমারী পূজা: সকাল ৯টা থেকে।
- সন্ধিপূজা: সন্ধ্যা ৫:৪৩ থেকে ৬:৩১ মিনিট পর্যন্ত।
মহানবমী (১লা অক্টোবর, বুধবার):
- পূজারম্ভ: সকাল ৫:৪০ মিনিট থেকে।
- হোম: দেবীর ভোগারতির পরে অনুষ্ঠিত হবে।
পুষ্পাঞ্জলি ও সন্ধ্যারতি:
- পুষ্পাঞ্জলি প্রতিদিন দেবীর ভোগারতির পর দেওয়া হবে।
- সন্ধ্যারতি প্রতিদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের আরতির পর অনুষ্ঠিত হবে।
বেলুড় মঠের দুর্গাপূজার পেছনের অলৌকিক কাহিনি: বেলুড় মঠের দুর্গাপূজার সূচনার পেছনে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক দর্শন রয়েছে। জানা যায়, ১৯০১ সালে দুর্গাপূজার কিছুদিন আগে স্বামী বিবেকানন্দ স্বপ্নে দেখেছিলেন যে বেলুড় মঠে পূজা করা হচ্ছে। ঠিক একই সময়ে স্বামী ব্রহ্মানন্দজী মহারাজও এক অলৌকিক দর্শন লাভ করেন, যেখানে তিনি মা দুর্গাকে দক্ষিণেশ্বর থেকে গঙ্গা পেরিয়ে বেলুড় মঠে আসতে দেখেছিলেন। এই দুটি অলৌকিক দর্শনের কথা জানার পরই স্বামী বিবেকানন্দ ব্রহ্মানন্দজিকে অবিলম্বে দুর্গাপূজার আয়োজন করার নির্দেশ দেন। সেই থেকে এই ঐতিহ্য আজও চলে আসছে।