রাত জাগার অভ্যাস, অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়, বলছে গবেষণা

যারা রাতে দেরি করে ঘুমাতে যান এবং সকালে দেরি করে ওঠেন, তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি বলে এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার মানুষের ওপর চালানো এই জরিপে দেখা গেছে, যারা সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন তাদের তুলনায় রাতজাগা মানুষদের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ১০ শতাংশ বেশি।

আন্তর্জাতিক ক্রোনোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রটিতে চার ধরনের মানুষকে নিয়ে গবেষণা করা হয়: যারা নিয়মিত সকালে ওঠেন, যারা মাঝে মাঝে সকালে ওঠেন, যারা মাঝে মাঝে দেরি করে ঘুমান এবং যারা নিয়মিত রাত জাগেন। গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত সকালে ওঠেন, তাদের গড় আয়ু রাতজাগা ব্যক্তিদের তুলনায় প্রায় সাড়ে ছয় বছর বেশি।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ফলাফলের সঙ্গে ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ, গোত্র, ওজন, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার মতো বিভিন্ন বিষয় জড়িত। এই সমস্ত দিক বিবেচনা করে দেখা গেছে, যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের অকাল মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম।

রাত জাগার ক্ষতিকর প্রভাব:
গবেষণায় দেখা গেছে, রাত জাগার অভ্যাস গড়ে তোলা মানুষদের ৯০ শতাংশ বিভিন্ন মানসিক ব্যাধির শিকার হন। এছাড়াও, ৩০ শতাংশের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। স্নায়বিক সমস্যা, অন্ত্রের রোগ এবং অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে বেড়ে যায়।

সুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যালকম ভনের মতে, রাত জাগার এই সমস্যা বর্তমানে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে এবং মানুষের দেহঘড়িকে সূর্যাস্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

দেহঘড়ি নিয়মে আনার টিপস:
নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টেন নুটসন কিছু সহজ টিপস দিয়েছেন, যা আমাদের দেহঘড়িকে নিয়মের মধ্যে আনতে সাহায্য করতে পারে:

১. শোবার ঘরের পরিবেশ: শোবার ঘর এমন হওয়া উচিত, যেখানে দিনের বেলা সূর্যের আলো সহজেই আসে এবং রাতে সম্পূর্ণ অন্ধকার থাকে।
২. নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম: প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং তা খুব দেরি করে হওয়া উচিত নয়।
৩. স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলুন এবং ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই আপোষ করবেন না।
৪. মোবাইল ও ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন: ঘুমানোর সময় মোবাইল, ল্যাপটপ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন।
৫. দিনের কাজ দিনে শেষ করুন: দিনের কাজ দিনের মধ্যেই শেষ করার চেষ্টা করুন, যাতে রাতে মানসিক চাপ কম থাকে।

তবে অধ্যাপক নুটসন আশ্বস্ত করেছেন যে, রাত জাগার কারণে আপনার শরীর মন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, শরীরের ৪০ থেকে ৭০ শতাংশ জৈব প্রক্রিয়া জিনের উপর নির্ভরশীল, বাকিটা জীবনযাত্রার ওপর। তাই চাইলেই কিছু পরিবর্তন আনা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy