নিম্নচাপের মেঘ কাটতে শুরু করায় আবারও আশার আলো দেখছেন সুন্দরবনের উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীরা। কাকদ্বীপ, নামখানা, পাথরপ্রতিমা ও সাগরের জনশূন্য ঘাটগুলো থেকে ইলিশ শিকারের জন্য ট্রলারগুলো আবার বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মরশুমের শুরুর দিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মৎস্যজীবীরা খুব বেশি দিন সমুদ্রে মাছ ধরতে পারেননি। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই যে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে, তাতেও বাজারে দাম কমার বদলে তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী, জোগান বাড়লে জিনিসের দাম কমে। কিন্তু ইলিশের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কাজ করছে না কেন? ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির অভিযোগ, এর পেছনে রয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ীদের কোল্ড স্টোরেজ।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি জানান, সমুদ্র থেকে ধরা পড়া ইলিশের একটা বড় অংশ সরাসরি কোল্ড স্টোরেজে চলে যাচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীরা এই মাছ মজুত করে ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে জোগান বাড়লেও খুচরো বাজারে দাম কমার বদলে তা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, যখন সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে, তখন পাইকাররা সেগুলো ডায়মন্ড হারবার এবং কলকাতার বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজে মজুত করা শুরু করেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে যখন ট্রলারগুলো ঘাটে ফিরে আসে এবং সমুদ্রে মাছ ধরা কমে যায়, তখন স্টোরেজে মজুত থাকা ইলিশ খুচরো বাজারে ছাড়া হয়। এর ফলে চাহিদার তুলনায় জোগান কৃত্রিমভাবে কম দেখিয়ে মাছ চড়া দামে বিক্রি করা হয়।
বিজন মাইতি আরও বলেন, ইলিশ দু’ধরনের স্টোরেজে রাখা হয়। একটি ফ্রোজেন স্টোরেজ, যেখানে মাইনাস ডিগ্রি তাপমাত্রায় মাছ দীর্ঘদিন মজুত রাখা যায় এবং অন্যটি বরফের মধ্যে রাখা, যা ৭-১০ দিনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই প্রক্রিয়ার কারণে পাইকারি বাজার এবং খুচরো বাজারের দামের মধ্যে অনেক পার্থক্য তৈরি হয়।
কাকদ্বীপের এক ট্রলার মালিক মেঘনাদ দাস বলেন, “ইলিশের দাম নিয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের কাছে মাছ মজুত রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ট্রলার মাছ আনার পর তা সরাসরি আড়তে চলে যায়। যদি সরকারিভাবে ইলিশ মজুত রাখার ব্যবস্থা থাকত, তাহলে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।” মৎস্যজীবী সংগঠনগুলো সরকারি হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে, যাতে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।