বর্তমান সময়ে আলসার বা পেটের ভেতরের অন্ত্রের দেওয়ালে ঘা হওয়া একটি প্রচলিত সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ভাজা-পোড়া খাবারের প্রতি আসক্তি এবং বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে সমাজের একটি বড় অংশ গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছে। এই গ্যাস্ট্রিকেরই দীর্ঘমেয়াদী এবং গুরুতর পরিণতি হতে পারে আলসার। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পাচনতন্ত্রে সাহায্যকারী রস নিঃসরণে গোলমালের কারণেই মূলত আলসারের সমস্যা দেখা দেয় এবং এই সমস্যাকে অবহেলা করলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
আলসারের কারণসমূহ:
আলসারের সমস্যার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি আরও কিছু কারণ দায়ী। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস, ধূমপান, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা এবং কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণেও আলসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আলসারের যে লক্ষণগুলো জানা জরুরি:
১. বমি বা বমি বমি ভাব: পাচনতন্ত্রে সাহায্যকারী রসের (যেমন অ্যাসিড) মাত্রার তারতম্যের কারণে প্রায়শই বমি বা বমি বমি ভাব হতে পারে। এটি আলসারের একটি সাধারণ লক্ষণ।
২. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া: যদি কোনো কারণ ছাড়াই আপনার ওজন দিন দিন কমতে থাকে, তাহলে এটি আলসারের একটি গুরুতর ইঙ্গিত হতে পারে। আলসারে আক্রান্ত হলে শরীর খাবার থেকে পুষ্টি সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না, যার ফলে ওজন কমে যায়।
৩. রক্তবমি: আলসারের সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে রক্তবমি হতে পারে। বমির সঙ্গে রক্ত দেখা গেলে তা জরুরি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার লক্ষণ, কারণ এটি ভেতরের রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত দেয়।
৪. অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা: ঢেকুর তোলা মানে মুখ দিয়ে পেটে জমে থাকা গ্যাস বের করা। যদিও সাধারণ গ্যাস্ট্রিকের কারণেও ঢেকুর ওঠে, তবে যদি ঢেকুর তোলার প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং এর সঙ্গে অন্যান্য আলসারের লক্ষণগুলোও বিদ্যমান থাকে, তবে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
৫. পেট ফুলে যাওয়া বা পেট ফাঁপা: মাঝে মাঝে গ্যাসের কারণে পেট ফুলে থাকা এক জিনিস। তবে যদি নিয়মিতভাবে পেট ফুলে থাকার সমস্যা থাকে এবং এর সঙ্গে পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি আলসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
চিকিৎসকরা জোর দিয়ে বলছেন, আলসারের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব এবং জীবন বাঁচানোও যেতে পারে।