হঠাৎ ডায়রিয়া, গরমে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, জেনে নিন জরুরি করণীয়

তীব্র গরমে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই সময়ে বাইরের খাবার গ্রহণ এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সকলেরই বাড়তি সতর্ক থাকা উচিত। ডায়রিয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে তা গুরুতর হতে পারে। তাই, ডায়রিয়া হলে দ্রুত কী করবেন, তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডায়রিয়া মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

১. খাবার স্যালাইন অপরিহার্য: ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। এই ঘাটতি পূরণের জন্য এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন আধা লিটার বিশুদ্ধ জলে গুলে পান করুন। এটি শরীরকে দ্রুত সতেজ করতে সাহায্য করে।

২. বেশি বেশি তরল খাবার: খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার যেমন – ডাবের জল, চিড়ার জল, স্যুপ, ভাতের মাড় ইত্যাদি খাওয়ানো প্রয়োজন। এই তরলগুলো শরীরের জলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন: ডায়রিয়া চলাকালীন কোমল পানীয়, ফলের জুস (বিশেষ করে মিষ্টি জুস), আঙুর এবং বেদানা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলো ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।

৪. বয়স অনুযায়ী স্যালাইন গ্রহণ:
* ১০ বছরের বেশি বয়সীরা: প্রতিবার পায়খানার পর এক গ্লাস খাবার স্যালাইন পান করুন।
* শিশুদের জন্য: প্রতিবার পায়খানার পর শিশুর যত কেজি ওজন, তত চা চামচ অথবা আনুমানিক যতটুকু পায়খানা করেছে, সেই হিসেবে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।

৫. বমি হলে ধীরে ধীরে খাওয়ান: যদি শিশু বমি করে, তাহলে ধীরে ধীরে স্যালাইন বা তরল খাবার দিন। প্রতি ৩-৪ মিনিট পরপর এক চা চামচ করে খেতে দিন, যাতে শরীর তা গ্রহণ করতে পারে।

৬. শিশুদের বুকের দুধ বন্ধ নয়: ২ বছরের নিচের শিশুকে ডায়রিয়া হলেও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

৭. ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক খাবার: ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত হবে এবং সে দ্রুত শক্তি ফিরে পাবে।

৮. জিংক ট্যাবলেটের গুরুত্ব: ৬ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুকে দৈনিক একটি করে জিংক ট্যাবলেট জলে গুলে একটানা ১০ দিন খাওয়াতে হবে। জিংক ডায়রিয়ার স্থায়িত্ব কমাতে এবং পরবর্তী সময়ে ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।

৯. কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন: যদি উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো নেওয়ার পরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয় বা বেশি খারাপ হয় (যেমন – তীব্র ডিহাইড্রেশন, জ্বর, রক্তযুক্ত পায়খানা, বারবার বমি), তাহলে অতি দ্রুত কাছের হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

এই গরমে ডায়রিয়া প্রতিরোধে বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলুন, পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। সুস্থ থাকুন, সতর্ক থাকুন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy