ভারতের সম্পদ বৈষম্য চরমে, শীর্ষ ১% ধনীর হাতে ৫৮% সম্পদ, মূল বিনিয়োগ রিয়েল এস্টেট ও সোনায়

ভারতে ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য আবারও প্রকট হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বার্নস্টেইনের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, দেশের শীর্ষ এক শতাংশ ধনী ব্যক্তিদের কাছে মোট সম্পদের প্রায় ৫৯ শতাংশ রয়েছে। এই ব্যক্তিরা, যাদের ‘অতি ধনী’ (Ultra High Net Worth Individuals – UHNI এবং High Net Worth Individuals – HNI) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, মূলত দুটি নির্দিষ্ট বিনিয়োগ উৎসের উপর মনোনিবেশ করে তাঁদের অধিকাংশ অর্থ বরাদ্দ করে থাকেন।

বার্নস্টেইনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের অতি ধনীদের প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ এখনও রিয়েল এস্টেট এবং সোনায় জমা রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অতি ধনীদের কাছে প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেবাযোগ্য সম্পদ রয়েছে, যার প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পদ এখনও রিয়েল-এস্টেট এবং সোনায় জমা রয়েছে।” এই তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিশাল অঙ্কের সম্পদ ঐতিহ্যবাহী এবং কম তরল সম্পদে আটকে আছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের মোট পারিবারিক সম্পদের মূল্য ১৯.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট সম্পদের ৫৯ শতাংশ, ধনী শ্রেণীর হাতে রয়েছে। এই অতি ধনীরা ভারতীয় জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ হলেও, দেশের মোট সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং আর্থিক সম্পদের ৭০ শতাংশ তাঁদের দখলেই রয়েছে।

অতি ধনীদের হাতে থাকা ১১.৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি ইক্যুইটি, মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা এবং ব্যাঙ্ক বা সরকারি আমানতের মতো ‘পরিষেবাযোগ্য’ আর্থিক সম্পদ হিসাবে জমা রয়েছে। বাকি ৮.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার রিয়েল এস্টেট, সোনা, প্রোমোটার ইক্যুইটি এবং মুদ্রা সম্পদের মতো ‘অ-পরিষেবাযোগ্য’ সম্পদে জমা রয়েছে। যেই ক্ষেত্রগুলি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের দ্বারা পরিচালিত হয় না বা সহজে পুনর্বণ্টন করা কঠিন।

নতুন প্রজন্মের ধনী এবং তাদের বিনিয়োগের ধরণ:

রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাই নেটওয়ার্থ ইন্ডিভিজুয়াল (HNI) অর্থাৎ উচ্চ বিত্তশালীর সংখ্যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ, এবং এদের সকলের বয়স ৩০ বছরের কম। অ্যানারক প্রপার্টি কনসালট্যান্ট নামক এক পরামর্শদাতা সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে উচ্চ বিত্তশালীদের সংখ্যা ২৫ শতাংশে পৌঁছবে। ওই সংস্থার গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ভারতীয় কোটিপতিদের প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৪০-এরও কম। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে ২০২৪ সালে ভারতের বিত্তশালীর পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ, যেখানে চিনের ক্ষেত্রে সেই বৃদ্ধির হার মাত্র ২ শতাংশ।

নতুন বিত্তশালীদের প্রায় ৩০ শতাংশ তাঁদের সম্পত্তি করেছেন প্রযুক্তি, স্টার্টআপ এবং ফিনটেকের মাধ্যমে। এর পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অবদান অনেকটাই বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও, রিপোর্টে দেখা গেছে যে, ১৪ শতাংশ অতি উচ্চ বিত্তশালীরা দুবাই, লন্ডন, সিঙ্গাপুরের মতো বিদেশী শহরে জমি বা বাড়ি কিনে রেখেছেন। দেশের ৩৭ শতাংশ বিত্তশালীরা ২০২৪ সালে ল্যাম্বরগিনি, পোর্শা, রোলস রয়েসের মতো দামি গাড়ি কিনেছেন। অতি উচ্চ বিত্তশালীরা বছরে প্রায় ছয় কোটি টাকা খরচ করেছেন শুধু আমোদপ্রমোদে।

এই রিপোর্ট ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পদ বৈষম্যের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক নীতির কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy