রাজ্য সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলার জট কি অবশেষে কাটতে চলেছে? সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার থেকে এই মামলার নিয়মিত শুনানির ইঙ্গিত দেওয়ায় সেই আশাই দেখছেন আন্দোলনরত সরকারি কর্মীরা। সোমবারও ডিএ মামলার শুনানি পিছিয়ে গেলেও, মঙ্গলবার বিস্তারিত শুনানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, প্রয়োজনে এই মামলার প্রতিদিন শুনানি হবে।
সোমবার শুনানিতে রাজ্যের তরফে আগামী সোমবার মামলাটি শোনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় করোল রাজ্যের সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে মঙ্গলবার শুনানির কথা জানান।
ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, রাজ্য সরকার ডিএ দিতে অনীহা দেখালেও দুর্গাপূজার ক্লাব অনুদান ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। তাদের প্রশ্ন, “ডিএ দেওয়ার বেলায় সরকারের কোষাগার শূন্যের কথা বলা হয়, অথচ ক্লাব অনুদানের জন্য কোথা থেকে টাকা আসছে?” সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে বকেয়া মেটানোর জন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিল। একইসঙ্গে রাজ্য জানিয়েছিল, বকেয়া ডিএ কর্মীদের দেওয়ার বদলে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত কোর্টের কাছে জমা রাখবে। রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ না মানায় একাধিক সরকারি কর্মী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেছে। এই সমস্ত বিষয় নিয়েই এবার সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত শুনানি হবে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এর আগে সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন যে, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান, যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান। দুই ধরনের কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক এখনো ৩৭ শতাংশ। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা এবং পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা।
সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপের পর এবার এটাই দেখার, রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন কিনা, পেলেও বকেয়ার কতখানি পাবেন এবং কবে থেকে সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। আদালতের নিয়মিত শুনানি নিঃসন্দেহে এই দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার একটি দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে।