মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হীরক রানি’ বলে গান গাওয়ার জেরে লোকসংগীত শিল্পী মনীন্দ্র বর্মনকে ‘ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে পেটানো’র হুঁশিয়ারি দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। শনিবার মন্ত্রীর এই বিস্ফোরক মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র শোরগোল পড়ে গেছে। অন্যদিকে, এই গান সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিল্পী মনীন্দ্র বর্মন।
মাথাভাঙার বাসিন্দা লোকসংগীত শিল্পী মনীন্দ্র বর্মন এর আগেও চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে গান গেয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। সেই সময় তাকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল এবং বেশ কিছুদিন বাড়ির বাইরে কাটাতে হয়েছিল বলেও অভিযোগ। এবার রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং নাম না করে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে গান গেয়ে তিনি নতুন করে বিপাকে পড়েছেন।
উদয়ন গুহের বিতর্কিত মন্তব্য:
শনিবার এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “স্বাধীনতা আছে বলে যা খুশি তাই করা যায় না।” তিনি আরও বলেন, “এর আগেও সে একটা গান গেয়েছিল তখন বলেছিল এটা সংস্কৃতি। এটা ওনার অধিকারের মধ্যে পড়ে। তবে আমি জানি না, একজন মুখ্যমন্ত্রীকে যে কোনও ভাষায় গালাগালি কটূক্তি করে গান বেঁধে সেই গান গেয়ে বেড়ানো সেটা যদি আমার স্বাধীনতা হয়; তাহলে এমনও তো হতে পারে অনেক যুবকের এই গান শোনার পর মনে হল গায়ককে ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে পেটাব সেটাও সেই যুবকদের স্বাধীনতা হতে পারে। আমাদের সামনে পড়লে পড়ে ও যেই ভাষায় গান করেছে সেই ভাষাতেই উত্তর দেব।”
মন্ত্রীর এই মন্তব্য বাকস্বাধীনতার উপর আক্রমণ বলে মনে করছেন অনেকে। এর তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে রাজনৈতিক মহলে।
শিল্পীর পাশে বিজেপি:
উদয়ন গুহের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “উদয়ন গুহ আগামী নির্বাচনে হারলে কে কে যে পেটাবে ঠিক নেই। বাড়ির লোকই হয়ত তাঁকে আর বাড়িতে রাখবে না। বাড়ি থেকে বের করে দেবে।”
এদিকে, শিল্পী মনীন্দ্র বর্মন নিজে এক সমাজমাধ্যম পোস্টে লিখেছেন, “গানটি সমাজমাধ্যমে আসার পর থেকেই ডিলিট করার জন্য ধমক দেওয়া হচ্ছে।” মন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্যের পর শিল্পীর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এই ঘটনা একদিকে যেমন বাকস্বাধীনতা এবং শিল্পীর অধিকার নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে, তেমনি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশেও নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। শাসক দলের মন্ত্রীর এমন ‘হুমকির’ পর শিল্পী মনীন্দ্র বর্মনের ভবিষ্যত কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।