কোলে শিশু নিয়ে হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘুরল মা, গুরুত্বই দিল না চিকিৎসক! অবহেলায় মৃত্যু জওয়ান পুত্রের

সামান্য জলশূন্যতা থেকে শুরু হয়ে একের পর এক হাসপাতালের রেফার এবং চূড়ান্ত অবহেলার শিকার হয়ে প্রাণ হারাল এক বছরের এক শিশু। দেশের সুরক্ষায় নিয়োজিত একজন জওয়ানের সন্তানের এমন মর্মান্তিক পরিণতি উত্তরাখণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম গাফিলতিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ঘটনার সূত্রপাত:

গত ১০ই জুলাই, উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা ছোট্ট শিবাংশ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মা বুঝতে পারেন যে, ছেলের শরীরে জলশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) দেখা দিয়েছে। দ্রুত তিনি সন্তানকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে সামান্য জলশূন্যতার রোগীকে কোনো রকম চিকিৎসা ছাড়াই ২২ কিলোমিটার দূরের বাগেশ্বর বাজিনাথের কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে রেফার করা হয়।

একের পর এক রেফার ও অবহেলা:

২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিশুটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে পৌঁছানোর পর প্রথম চিকিৎসা পায়। কিন্তু ততক্ষণে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। এরপর তাকে আবার ২০ কিলোমিটার দূরের বাগেশ্বর জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। শিবাংশের বাবার অভিযোগ, জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছালেও তাদের কেউ গুরুত্বই দেয়নি। কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজের ফোনে ব্যস্ত ছিলেন, আর নার্সরা খোশমেজাজে গল্প-আড্ডায় মগ্ন ছিলেন।

যতক্ষণে তাদের নজর পড়ে, ততক্ষণে শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং আইসিইউতে নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ফলত, আবারও রেফার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নিহত শিশুর মা অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন, যা হাসপাতালে পৌঁছায় আড়াই ঘণ্টা পর, তাও আবার জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে।

মর্মান্তিক পরিণতি:

এরপর রাতের দিকে শিশুটিকে আলমোরা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার রেফার করা হয়। অবশেষে শিশুটিকে নৈনিতালের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। ১২ জুলাই শিশুটিকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়, কিন্তু ১৬ জুলাই তার মৃত্যু হয়। সীমান্তে বাবার কাছে পৌঁছায় ছেলের মৃত্যুর হৃদয়বিদারক খবর।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত:

ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামী। তিনি বলেছেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। যদি কোনো স্বাস্থ্যকর্মী তার কর্তব্য পালনে সেদিন গাফিলতি দেখিয়ে থাকেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এই ঘটনা উত্তরাখণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং সরকারি হাসপাতালে রোগীদের প্রতি অবহেলার চিত্রকে স্পষ্ট করে তুলেছে। দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী একজন জওয়ানের সন্তানের এমন পরিণতি সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy