“ভুল অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে টাকা”-কৃষিতে ক্ষতির টাকা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন চাষিরা

চলতি বছরের মার্চ মাসে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বিতরণকে কেন্দ্র করে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের জেনকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তীব্র অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা ভুল অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে, কেউ কম পেয়েছেন তো কেউ বেশি, এমনকি বাদাম চাষের ক্ষতির টাকা ঢুকেছে ধান চাষির অ্যাকাউন্টে! এই আর্থিক অনিয়ম নিয়ে বৃহস্পতিবার কৃষি দপ্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ক্ষুব্ধ কৃষকরা।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে, পুলিশ, বীমা সংস্থা এবং কৃষি দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সাথে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে, ভুল সংশোধন করা হবে এবং তারপরই সঠিক ব্যক্তিকে টাকা ছাড়া হবে।

চলতি বছরের মার্চ মাসে শিলাবৃষ্টির ফলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৬টি ব্লকের ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এই ক্ষতির জন্য সম্প্রতি বীমা সংস্থা প্রায় ১৩৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। জেনকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি মৌজায় মোট ৫৯৬৩ জন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, যাদের জন্য ১৬ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ হয়েছে।

টাকা হাতে পেতেই কৃষকদের মধ্যে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। অজিতকুমার দে নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক অভিযোগ করেন, “আমার ধানের ক্ষতি হয়েছিল। দেখছি বাদামের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ফলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ মেলেনি। দ্রুত নির্দিষ্ট ক্ষতিপূরণের টাকা চাই।” অশোককুমার ভুঁইয়া নামে আরেক কৃষক জানান, “আমি যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিলাম সেটি ব্যবহার করা হয়নি। ক্ষতিপূরণের তালিকায় দেখছি অন্য কারও অ্যাকাউন্ট নম্বর।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই ক্ষতিপূরণ বিতরণে বেশ কয়েকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। কারো ৫ বিঘা জমির ধান চাষে ক্ষতি হলেও তিনি ২ বিঘার ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। আবার কারো ৩ বিঘা জমির বাদাম চাষের ক্ষতি হলেও তিনি ৪ বিঘার ক্ষতিপূরণ অর্থাৎ বেশি টাকা পেয়েছেন। এমনকি, যেখানে ক্ষতি হয়নি, সেই পাশের মৌজার চাষির নামও ক্ষতিপূরণের তালিকায় ঢুকে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, ২০-৩০ জন ক্ষতিগ্রস্ত চাষির জন্য একটি মাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেখানো হয়েছে।

দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ঘটনাটি জানার পরেই বীমা সংস্থাকে ভুল শুধরে নেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছি। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়েছিল। তা মাঝপথে হঠাৎ পরিবর্তন হলো কী করে?” প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কোনো পরিবর্তন হয়েছে নাকি প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই এই অব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এই পুরো ঘটনাটি স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাবে সরকারি প্রকল্প বিতরণের দুর্বল দিকটিকেই সামনে এনেছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy