“সমাজ এগোচ্ছে না পিছোচ্ছে?” স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে যা বললেন মমতা শঙ্কর!

পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মমতা শঙ্করের (Mamata Shankar) সাম্প্রতিক এক মন্তব্য ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন এবং বাবা বা সন্তানকে দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেতেই নেটিজেনদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। তাঁর এই মন্তব্য কি সমাজকে পিছিয়ে দিচ্ছে, নাকি এটি একটি প্রজন্মগত মানসিকতার প্রতিফলন – এই প্রশ্নই এখন নেটপাড়ার আলোচনার মূল বিষয়।

মমতা শঙ্করের মন্তব্য কী ছিল?

একটি সাক্ষাৎকারে মমতা শঙ্কর স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং অন্তর্বাসের খোলাখুলি বিজ্ঞাপন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “সমাজ এগোচ্ছে না পিছোচ্ছে?” তাঁর মতে, মেয়েদের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই জিনিসগুলির আলাদা করে বিজ্ঞাপনের কোনো প্রয়োজন নেই। টেলিভিশনে এমন বিজ্ঞাপন দেখলে তিনি নাকি লজ্জাবোধ করেন। তিনি আরও বলেন, “আমি এতটাও মডার্ন হতে পারিনি যে সন্তান বা বাবাকে দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার কথা ভাবতে পারি।” তাঁর এই ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশই বিতর্কের সূত্রপাত।

নেটিজেনদের তীব্র প্রতিক্রিয়া: ‘মানসিকতা আজও পিছিয়ে’

মমতা শঙ্করের এই মন্তব্যের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা তাঁর ‘মানসিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সমালোচকদের অনেকেই এটিকে ‘অসভ্য’, ‘নীচ’, এবং ‘রিগ্রেসিভ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, “একেবারে টিপিক্যাল অসভ্য, নীচ, রিগ্রেসিভ মহিলা।” আবার কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন, “উনি নারীবাদ কী বোঝেন না কিন্তু সিউডো নারীবাদ কী সেটা বোঝেন! আশ্চর্য্য লেভেলের সিউডো মানুষ! অসভ্যতার পরাকাষ্ঠা একেবারে!”

কেউ কেউ সরাসরি তাঁর পদ্মশ্রী প্রাপ্তির উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, “সত্যি কথা বলতে উনি তো আর নাচের জন্য পদ্মশ্রী পাননি, অভিনয়ের জন্যও নয়। উনি পেয়েছেন এই রিগ্রেসিভ কথাবার্তা বলার জন্যই।” এমন প্রশ্নও উঠেছে, “উনি যে দোকান থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনেন, সেটিও কি মহিলা পরিচালিত?” বহু নেটিজেন একযোগে মন্তব্য করেছেন, “সমাজ এগিয়ে, দেশ এগিয়ে কিন্তু ওনার মানসিকতা আজও পিছিয়ে।”

ঋতুস্রাব এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি

ঋতুস্রাব প্রতিটি নারীর জীবনে একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। বর্তমান সমাজে যেখানে নারী প্রগতি এবং মাসিক স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে, সেখানে একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর এমন মন্তব্যে নেটপাড়া ক্ষুব্ধ। নেটিজেনদের মতে, স্যানিটারি ন্যাপকিন সকলের সামনে কেনা বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দিয়ে কেনানোর মধ্যে লজ্জাবোধ করার মতো কিছু নেই। এটি একটি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য, ঠিক যেমন অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।

এই বিতর্ক শুধু মমতা শঙ্করের ব্যক্তিগত মতামতকে কেন্দ্র করে নয়, বরং ঋতুস্রাবকে ঘিরে সমাজে আজও যে প্রচ্ছন্ন ছুঁতমার্গ এবং ট্যাবুর বাতাবরণ রয়েছে, সেদিকেই যেন নতুন করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই ঘটনা কি সমাজে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনার পথ প্রশস্ত করবে, নাকি রক্ষণশীলতার শেকল আরও শক্ত করবে – সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy