সুদীপ রায়চৌধুরী ও রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রামনাম আর নয়! বঙ্গ বিজেপি অবশেষে পুরোপুরি বঙ্গীয়করণের চেষ্টায় নেমেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের সভার আমন্ত্রণপত্রে এবার উধাও হয়ে গেছে বিজেপির চিরাচরিত ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান। বদলে বিজেপি নেতৃত্ব মা দুর্গা ও মা কালীর শরণ নিয়েছে।
শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য বিজেপির সভাপতি হওয়ার পরই এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। বিজেপির ‘অবাঙালি’র দল তকমা ঝেড়ে ফেলতে মরিয়া শমীক নিজের অভিষেক মঞ্চেই বড় করে সাঁটিয়েছিলেন মা কালীর ছবি। সেই উদ্যোগ যে বিচ্ছিন্ন নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার আগেও বঙ্গ বিজেপির কর্মকাণ্ডে তা স্পষ্ট বোঝা গেল।
ঠিক ৫০ দিন পর রাজ্যে ফের পা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার দুর্গাপুরে তাঁর জোড়া কর্মসূচি রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের সভার আমন্ত্রণ পত্রে বিজেপির চিরাচরিত ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উধাও। বদলে ‘ভারত মাতা কি জয়’ লেখার পর লেখা হয়েছে ‘জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী’ স্লোগান। বৃহস্পতিবার বাড়ি বাড়ি বিলি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার ওই আমন্ত্রণপত্র। ‘প্রিয় দুর্গাপুরবাসী…,’ এই ভাবে চিঠি শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় লাইনেই লেখা, ‘ভারত মাতার জয়, জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী।’
আসলে শমীক ভট্টাচার্য সার্বিকভাবে দলের ‘ভাবমূর্তি’ মেরামত করার একটা চেষ্টা করছেন। একটা বড় অংশের বাঙালিদের মনে বিজেপি সম্পর্কে নেতিবাচক, উগ্র হিন্দুত্ববাদী এবং ‘বাঙালি বিরোধী’ একটা ভাবমূর্তি তৈরি করে ফেলেছে বলে শাসকদল মনে করে। দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারীদের উগ্র ভাষণ সেই ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতেই আরও সাহায্য করেছে। বিজেপি যতই রামনবমী পালন করুক বা সভা-সমিতিতে রামের নামে স্লোগান দিয়ে ভিড় জড়ো করার চেষ্টা করুক, বাঙালি যে সেই স্লোগানের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করতে পারছে না, সেটা অতীতে ভোট বাক্সে প্রমাণ মিলেছে। শমীকরা মনে করছেন, রামনামে আর যা-ই হোক, তৃণমূল তাড়ানো মুশকিল। তাই তিনি দলকে বাঙালি সংস্কৃতি এবং ধর্মাচরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছেন। সেকারণেই সম্ভবত মোদীর সভার আমন্ত্রণ পত্রে দুর্গা-কালীর নাম। যদিও তৃণমূলের প্রশ্ন, মা কালী বা দুর্গার নামে এই দেখনদারি বা সংকীর্ণ রাজনীতি করার কি খুব দরকার?