ভারতীয় রেল প্রবীণ নাগরিকদের যাত্রাকে আরও আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতদিন লোকাল ট্রেনের প্রথম ও শেষ কামরায় নির্দিষ্ট কিছু আসন প্রবীণদের জন্য সংরক্ষিত থাকলেও, এবার তাদের জন্য চালু হচ্ছে সম্পূর্ণ একটি আলাদা কামরা। প্রাথমিকভাবে মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে পরীক্ষামূলকভাবে এই পরিষেবা শুরু হয়েছে। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই এই সুবিধা দেশের অন্যান্য রাজ্যেও সম্প্রসারিত হবে, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের লক্ষ লক্ষ প্রবীণ ট্রেনযাত্রীর মধ্যেও আশার আলো সঞ্চার হয়েছে।
মুম্বাই থেকে শুরু, দেশজুড়ে প্রসারের পরিকল্পনা:
মুম্বাইয়ের ব্যস্ত রেল নেটওয়ার্কে, বিশেষ করে ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ডোম্বিভলি পর্যন্ত চলাচলকারী ইএমইউ (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) লোকাল ট্রেনের ষষ্ঠ কামরাটি সম্পূর্ণরূপে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এই কামরায় প্রবীণদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে বিশেষ বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে ২ বা ৩ জন করে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যে বসতে পারবেন। প্রবীণদের ওঠানামার সুবিধার জন্য বিশেষ সিঁড়ি এবং দরজার সামনে মজবুত হাতলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে চলন্ত ট্রেনেও তারা ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। এছাড়াও, জরুরি অবস্থার জন্য ‘ইমার্জেন্সি ল্যাডার’ বা সিঁড়ির মতো সুরক্ষামূলক ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ভারতীয় রেল বিশ্বাস করে, এই উদ্যোগ প্রবীণ যাত্রীদের যাতায়াতকে আরও নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত করবে।
বাংলার জন্য আশার খবর:
পশ্চিমবঙ্গে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ, বিশেষ করে বয়স্করা, দৈনন্দিন যাতায়াতের জন্য লোকাল ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। রেল সূত্রে খবর, এই রাজ্যের লোকাল ট্রেনগুলিতেও খুব শীঘ্রই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য এই বিশেষ সংরক্ষিত কামরা চালু হতে পারে। এই খবর নিঃসন্দেহে রাজ্যের প্রবীণ যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তি নিয়ে আসবে।
টিকিটের ছাড় নিয়ে পুরোনো ক্ষত, নতুন উদ্যোগে কিছুটা মলম:
উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর আগে প্রবীণ নাগরিকরা রেল টিকিটে বিশেষ ছাড় পেতেন। কিন্তু ২০২০ সালের মার্চ মাসে রেল বোর্ড এই ছাড় তুলে নিলে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং সংসদ পর্যন্ত উত্তাল হয়। এখনও পর্যন্ত সেই ছাড় পুনর্বহাল করার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ কোনো স্পষ্ট ঘোষণা করেনি, যার ফলে বহু প্রবীণ নাগরিক আর্থিক অসুবিধায় পড়ছেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রবীণদের জন্য বিশেষ কামরা চালুর এই সিদ্ধান্ত তাদের কাছে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে এনেছে।
ভারতীয় রেলের এই নতুন উদ্যোগটি প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি তাদের ক্রমবর্ধমান সংবেদনশীলতারই প্রতিফলন। এই পদক্ষেপ কেবল তাদের যাতায়াতকে সহজ করবে না, বরং তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে। ভবিষ্যতে এই বিশেষ সুবিধা দেশের প্রতিটি লোকাল ট্রেন পরিষেবায় ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে, যা প্রবীণ সমাজের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।