দুর্গাপুরে মোদীর রোড শোয়ের পথে নাটকীয়তা, উন্নয়ন বনাম বঞ্চনার স্লোগান!

ছয় বছর পর দুর্গাপুরের মাটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন ঘিরে একদিকে যেমন সাজ সাজ রব, তেমনই নাটকীয়তা আর রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ। শুক্রবার দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে তাঁর জোড়া কর্মসূচি – প্রথমে প্রশাসনিক সভা, তারপর বিশাল রাজনৈতিক জনসভা। কিন্তু এই মেগা-শুরুর আগেই দুর্গাপুরের রাস্তা সাক্ষী থাকল এক মিশ্র চিত্রের।

বেলা আড়াইটে নাগাদ প্রধানমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় পৌঁছানোর কথা। তার আগে দুর্গাপুর গান্ধী মোড় থেকে নেহরু স্টেডিয়াম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে তাঁর রোড শো করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই রোড শো-কে ঘিরে বিজেপি কর্মীরা রাস্তার দু’পাশ দলীয় পতাকা আর প্রধানমন্ত্রীর কাট-আউটে মুড়ে দিয়েছেন, যা এক উৎসবের মেজাজ তৈরি করেছে।

রাস্তায় কান্নার রোল: অপ্রত্যাশিত দৃশ্য

তবে, এই উৎসবের আবহের মধ্যেই ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। নেহরু স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তার উপর এক মহিলা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কাতর আবেদন জানাতেই তিনি অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ দ্রুত এসে তাঁকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর সফরের রাজনৈতিক গ্ল্যামারের বাইরে এক ভিন্ন মানবিক আবেদন তৈরি করেছে, যেখানে একজন সাধারণ নাগরিকের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছনোর আকুতি ধরা পড়েছে।

কটাক্ষের ব্যানার, প্রশ্নের মুখে মোদী

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের আগেই দুর্গাপুর শহর জুড়ে বেশ কিছু হোডিং ও পোস্টার টাঙিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করা হয়েছে। এই হোডিংগুলিতে লেখা রয়েছে, “বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি কবে খুলবে, মোদি তুমি জবাব দাও।” বন্ধ কল-কারখানা এবং কর্মসংস্থানের অভাব নিয়ে স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিফলন এই ব্যানারগুলি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বার্তার বিপরীতে এটি যেন এক নীরব প্রতিবাদ, যা তাঁর প্রশাসনিক সভার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

রাঢ়বঙ্গে বিজেপির অগ্নিপরীক্ষা

উনিশের লোকসভা এবং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর সহ রাঢ়বঙ্গের একাংশ বিজেপিকে ভালো ফল এনে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে এই অঞ্চলে পদ্ম শিবিরের পিছিয়ে পড়া স্পষ্ট। তৃণমূল ফের নিজের জমি পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে দুর্গাপুর এবং সংলগ্ন কেন্দ্রগুলিতে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাঢ়বঙ্গে নিজেদের হাত শক্ত করতে মরিয়া বিজেপি। মোদীর এই বিশাল জনসভা সেই লক্ষ্য পূরণে কতটা সক্ষম হয়, সেটাই এখন দেখার। বন্ধ কল-কারখানার প্রশ্ন আর এক মহিলার আকুতি, এসব ছাপিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি কতটা মানুষের মন জয় করতে পারে, তার ওপরই নির্ভর করছে রাঢ়বঙ্গে বিজেপির ভবিষ্যৎ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy