বিশেষ: আসছে দেবাদিদেব শিবের মাস ‘শ্রাবণ’, জেনে নিন জ্যোতির্লিঙ্গ ও শিবলিঙ্গের পার্থক্য?

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক পরম পবিত্র মাস, দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় শ্রাবণ মাস শুরু হচ্ছে আগামীকাল, ১৮ জুলাই। আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ভক্তরা মাসব্যাপী নিষ্ঠাভরে শিবের আরাধনা করবেন, যা সুখ, সমৃদ্ধি এবং মধুর দাম্পত্য জীবন বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করা হয়।

শ্রাবণের বিশেষত্ব ও ব্রত পালনের মাহাত্ম্য:

শ্রাবণ মাস মহাদেবের প্রতি ভক্তি নিবেদনের মাস হিসেবে বিবেচিত। এই মাসে শুধু বিবাহিত মহিলারাই নন, অবিবাহিত নারী এবং বহু পুরুষও স্বামীর মঙ্গল কামনায় কিংবা ব্যক্তিগত সুখ-শান্তির জন্য কঠোর ব্রত পালন করেন। প্রতি সোমবার ভক্তরা শিবের উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্রত রাখেন এবং নিষ্ঠাভরে পুজো করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিব মন্দিরগুলিতে এই সময় ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরে ভোলেবাবার মাথায় জল ঢেলে ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা পূরণ কামনা করেন। মন্দিরের পাশাপাশি বহু বাড়িতেও মহাদেবের বিশেষ পুজো-অর্চনা করা হয়।

এবারের শ্রাবণ মাসের সোমবারগুলি:

২০২৫ সালের শ্রাবণ মাসে মোট চারটি সোমবার পড়েছে, যা শিবের উপাসনার জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়:

প্রথম সোমবার: ২১ জুলাই (৪ শ্রাবণ)

দ্বিতীয় সোমবার: ২৮ জুলাই (১১ শ্রাবণ)

তৃতীয় সোমবার: ৪ আগস্ট (১৮ শ্রাবণ)

চতুর্থ সোমবার: ১১ আগস্ট (২৫ শ্রাবণ)

শিবলিঙ্গ বনাম জ্যোতির্লিঙ্গ: একটি স্পষ্ট ধারণা

শ্রাবণ মাসে অনেকেই শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ভোগেন। যদিও উভয়ই মহাদেবেরই প্রতীক, এদের মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য:

জ্যোতির্লিঙ্গ: শিবপুরাণ অনুসারে, যেসকল স্থানে স্বয়ং ভগবান শিব জ্যোতি বা আলোর রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন, সেই পবিত্র স্থানগুলিকেই জ্যোতির্লিঙ্গ বলা হয়। ভারতে এমন মোট ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয়, এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করলে ভক্তরা স্বয়ং মহাদেবের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করেন এবং জীবনে সুখ ও শান্তি আসে।

শিবলিঙ্গ: অন্যদিকে, শিবলিঙ্গ হলো মহাদেবের এমন একটি প্রতীক যা ভক্তদের দ্বারা পূজা করার জন্য তৈরি করা হয় অথবা যেখানে স্বয়ং শিবের ঐশ্বরিক উপস্থিতি রয়েছে বলে মনে করা হয়। ‘শিবলিঙ্গ’ শব্দের অর্থ হলো অনন্ত, অর্থাৎ যার কোনো শুরু বা শেষ নেই। এটিকে পরমেশ্বরের প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, শিবলিঙ্গের নিয়মিত পুজো করলে গৃহে সুখ, সমৃদ্ধি এবং শান্তি বজায় থাকে এবং ভগবান ভোলেনাথের কৃপা সর্বদা পরিবারের ওপর বর্ষিত হয়।

এই পবিত্র শ্রাবণ মাসটি ভক্তদের জন্য মহাদেবের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। নিষ্ঠা ও ভক্তির সঙ্গে আরাধনার মাধ্যমে জীবনের সকল বাধা দূর করে আধ্যাত্মিক শান্তি লাভই এই মাসের মূল লক্ষ্য।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy