আমাদের শরীর এক জটিল যন্ত্রের মতো, যা প্রতিনিয়ত নানা সংকেত দিয়ে যায়। এই সংকেতগুলো আমরা অনেক সময় অবহেলা করি, যার ফলে ছোট সমস্যাও বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে দেহের প্রতিটি অস্বাভাবিক লক্ষণের দিকে নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখানে এমন ৯টি লক্ষণের কথা বলা হলো, যা দেখলে আপনাকে দ্রুত সতর্ক হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
১. চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল:
যদি আপনার চোখের নিচে গাঢ় ডার্ক সার্কেল দেখা যায়, তাহলে সতর্ক হন। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এর প্রধান কারণ হতে পারে, যা আরও বহু সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রতিদিন রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এছাড়াও, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার কারণেও এমন লক্ষণ দেখা যেতে পারে। মূলত রক্তের লোহিত কণিকা কমে গেলে এই সমস্যা দেখা যায়।
২. আঙুলের রঙের পরিবর্তন:
আপনার হাতের ও আঙুলের রঙ যদি প্রায়শই অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয় (যেমন, নীলচে বা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া), তাহলে এটি কোনো মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে হতে পারে, যেমন রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা বা রেনডস সিনড্রোম। তাই এমনটা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. ঝাপসা দৃষ্টি:
বিভিন্ন সময়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। এটি শুধু চোখের সমস্যাই নয়, দেহের অন্য কোনো অন্তর্নিহিত সমস্যার (যেমন, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ) কারণেও হতে পারে। এমনকি এটি কোনো মারাত্মক রোগের বা অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে। তাই এ ধরনের সমস্যা কোনোভাবেই হেলাফেলা করা যাবে না।
৪. চোখে অযাচিত বিন্দু বা দাগ দেখা:
স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তিতে এমন কিছু আলো বা বিন্দুর উপস্থিতি থাকবে না। কিন্তু আপনি যদি চোখের সামনে বা দৃষ্টিতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো বিন্দু বা দাগ ভাসতে দেখেন, তাহলে তা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। এগুলো যদি এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটি রেটিনার সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
৫. পেটে অস্বাভাবিক শব্দ:
স্বাভাবিকভাবে খাবার হজমের সময় পেটে সামান্য শব্দ হতে পারে, যাকে আমরা ‘পেট ডাকা’ বলি। কিন্তু এর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। আপনার যদি পেটে অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত শব্দ টের পান, তাহলে সতর্ক হন। এটি অন্ত্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার লক্ষণও হতে পারে, যেমন গ্যাস, বদহজম বা এমনকি আরও গুরুতর কোনো প্রদাহ।
৬. ত্বকের বহিরাংশ উঠে যাওয়া (ত্বকের ফ্লেকিং):
ত্বকের উপরের স্তর উঠে যাওয়া বা ফ্লেকিং স্বাভাবিক বিষয় নয়। আপনার যদি এমনটা হয়, তাহলে সতর্ক হন। সাধারণত ভিটামিনের অভাবে এমনটা দেখা যায় (যেমন, ভিটামিন এ বা জিঙ্কের অভাব)। তাই পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খান। যদি এতেও সমস্যা দূর না হয়, তাহলে থাইরয়েড সমস্যা বা অন্যান্য চর্মরোগের মতো অন্য কোনো কারণও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তেমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৭. ঘ্রাণশক্তি লোপ:
যেকোনো জিনিসের গন্ধ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নাক গ্রহণ করতে পারে। ঠাণ্ডা লাগলে কিংবা অন্য কোনো কারণে তা সাময়িকভাবে বাধা পেতে পারে। তবে দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়া যদি আপনার ঘ্রাণশক্তি লোপ পায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি সাইনাস সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা বা এমনকি মস্তিষ্কের কিছু রোগেরও লক্ষণ হতে পারে।
৮. চোখের অস্বাভাবিক পলক:
স্বাভাবিকভাবে আমাদের চোখ কয়েক সেকেন্ড পর পর পলক ফেলে। এটি চোখের শুষ্কতা রোধে এবং ধুলোবালি দূর করতে সাহায্য করে। আপনার চোখের এই পলক ফেলার বিষয়টি যদি হঠাৎ দীর্ঘায়িত হয়ে যায় বা খুব বেশি ঘন ঘন হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এটি আপনার নার্ভাস সিস্টেমের (স্নায়ুতন্ত্রের) সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৯. কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনা (টিনিটাস):
কানে অস্বাভাবিক শব্দ শোনা, যেমন একটানা ভোঁ ভোঁ, হিস হিস বা শিস দেওয়ার মতো আওয়াজ (টিনিটাস), এর নানা কারণ থাকতে পারে। সময়মতো এর কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা না হলে সমস্যাটি পরবর্তীতে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে, এমনকি শ্রবণশক্তিও প্রভাবিত হতে পারে। তাই এ সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
এই লক্ষণগুলো দেখলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আপনার সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।