গরম ধোঁয়া ওঠা সাদা সরু ভাতে ভুর ভুর করা ঘিয়ের গন্ধ, সঙ্গে আলুসেদ্ধ বা মাছভাজা—এই দৃশ্যপট বাঙালির চিরন্তন রসনাতৃপ্তি। অনেকে আবার ঘিয়ের অভাবে মাখন দিয়েই কাজ সারেন, কারণ মাখন ভাতও কম অমৃতসম নয়। তবে স্বাদের পাশাপাশি, আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের দিকেও খেয়াল রাখা জরুরি। প্রশ্ন হলো, ঘি না মাখন—আমাদের শরীরের জন্য কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর? চলুন, এই বিষয়ে পুষ্টিবিজ্ঞান কী বলছে তা জেনে নেওয়া যাক।
পুষ্টির তুলনা: এক নজরে ঘি বনাম মাখন
পুষ্টিগত দিক থেকে ঘি এবং মাখনের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:
ঘি: এটি এক প্রকার আনপ্রসেসড ফ্যাট (অপরিশোধিত চর্বি)। ঘিতে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন A। প্রতি ১০০ গ্রাম ঘি থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৯০০ কিলোক্যালোরি শক্তি। এতে ৬০ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট (সম্পৃক্ত চর্বি) থাকলেও, কোনো ট্রান্স ফ্যাট থাকে না।
মাখন: মাখনে ভিটামিন A থাকে না। প্রতি ১০০ গ্রাম মাখন থেকে পাওয়া যায় প্রায় ৭১৭ কিলোক্যালোরি শক্তি। এতে ৫১ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ৩ গ্রাম ট্রান্স ফ্যাট থাকে।
কেন ঘি এগিয়ে?
উপরে উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ক্যালোরির দিক থেকে মাখনের চেয়ে ঘিতে সামান্য বেশি শক্তি থাকলেও, ঘি বেশি স্বাস্থ্যকর। এর প্রধান কারণ হলো:
১. ট্রান্স ফ্যাটের অনুপস্থিতি: ঘিতে কোনো ট্রান্স ফ্যাট থাকে না, যা মাখনে বিদ্যমান। ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।
২. ভিটামিন A এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ঘিতে ভিটামিন A থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য উপকারী। মাখনে এই উপাদানগুলি অনুপস্থিত বা কম পরিমাণে থাকে।
৩. উচ্চ স্মোকিং পয়েন্ট: ঘি-এর স্মোকিং পয়েন্ট (যে তাপমাত্রায় তেল বা ফ্যাট পুড়তে শুরু করে) মাখনের থেকে অনেক বেশি। এর অর্থ হলো, উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করার সময় ঘি মাখনের চেয়ে কম ক্ষতিকারক যৌগ উৎপন্ন করে।
সুতরাং, যদিও উভয়ই ফ্যাট এবং পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত, কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বিবেচনা করলে ঘিকেই বেশি উপকারী বলে মনে করা হচ্ছে। তাই গরম ভাতে যদি স্বাস্থ্য এবং স্বাদের সঠিক মেলবন্ধন চান, তবে মাখনের চেয়ে ঘিই হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।